1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :

কুরবানী ঈদে ফ্রিজ বনাম মিসকিনী ভাগ

ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০২১ ১:২৫ am

মোঃ মাহাবুব আলম: ছোট বেলায় বাবা যখন কুরবানি দিতো তখন খুব আনন্দ পেতাম। বাসা থেকে মা বলে দিত এই ঈদে নতুন জামা ও ঈদ সালামি পাবে না। এই ঈদে কুরবানি দিতে হবে। এটাই এই ঈদের আনন্দ। ঈদে গরু কিংবা ছাগল দিয়ে কুরবানি দেওয়ার পরম আনন্দ উপভোগ করতাম। তখন দেখতাম গরু দিয়ে কুরবানি দিলে মাঠেই তিন ভাগের একভাগ গোশত আলাদা করে সেগুলোকে উপস্থিত মিসকিনদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হত।

বাকী গোশত সাতভাগে ভাগিদারদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হত। আমরা যথারীতি আমাদের ভাগ বাসায় নিয়ে এসে দেখতাম বাড়িতে অনেক মিসকিন দাঁড়িয়ে আছে যাদের বেশিরভাগই পর্দানশীল মহিলা। বাবা তাদের মাঝে আবার গোস্ত বিতরণ করতেন। বিতরণ শেষে ঘরে বাকি গোশত নিয়ে যাওয়া হলে মা বলতো আমার কাছে রহিমার মা, ছকিনার মা সহ প্রায় আট দশ জন পলিথিন দিয়ে গেছে, আর বলেছে কাকি আমরা এসে পরে নিয়ে যাব। বাবা বললো আচ্ছা ঠিক আছো দিও। এর পর বাবা তার নিকটাত্মীয় যারা কুরবানি দিতে পারে নি তাদের বাড়িতে গোশতের পোটলা পৌঁছে দিতেন। এমনকি দু’একজন পাড়া প্রতিবেশীকেও।

কুরবানি ঈদের আগের দিন বাবা রোজা রাখতেন। ঈদের দিনও কুরবানির গোশত রান্না করার আগে কিছু খেতেন না। তাই মা তারাহুরা করে পলিথিন রেখে যাওয়া মিসকিনদেন জন্য নিজের মত করে গোশত রেখে বাকি গোশত তিন ভাগ করে ধুয়ে ফেলতেন। একভাগ রান্না করে আগেই বানিয়ে রাখা চালের গুরি দিয়ে তৈরি রুটি সহ আমাদের সকলের সামনে পরিবেশন করতেন।

মনে পরে যোহরের নামাজের আগে খুব বেশী ঈদে কুরবানীর গোশত খেতে পারিনি। যদি দু’একবার খেতে পারতাম তাহলে অন্যরকম বাহবা পেতাম। যা হোক যখনই আমরা খেতে বসতাম তখনি ওই পলিথিন রেখে যাওয়া রহিমার মা আর ছকিনার মা’রা আসতো তাদের মিসকিনি ভাগ নেওয়ার জন্য আর বলতো “কইগো খালা/কাকী আমাগো লইগ্যা রাখছেন্নি কিছু, রান্ধা শেষ মনে হয়?”। তখন মা বলতো রাখছি তোগ লাইগা। আগে বস, খাইয়া ল, তার পর নিস। খাওয়া শেষে তারা মিসকিনি ভাগ নিয়া দোয়া করতে করতে বাড়ি ত্যাগ করতো।

বিকেল বেলা বাবা তার বন্ধুদের পাড়া প্রতিবেশীদের, আর বড় ভাই সন্ধ্যায় পর তার বন্ধুদের নিয়ে এসে রুটি গোশত খাওয়াতেন। রাতের মধ্যেই কয়েক দফায় আমাদের গোশত শেষ হয়ে যেত। পরের দিন আর গোশত খেতে পারতাম না। অথচ গোশত খেতে খুব ইচ্ছে করত। পরের দিন মা গরুর পেটি অথবা কলিজা, হোশ রান্না করতেন। তা দিয়েই দ্বিতীয় দিনের ঈদ চলত। তিলাই কিন্তু প্রথম দিনই আমরা চুলার আগুনে পুড়ে খেয়ে ফেলতাম। তৃতীয় দিন চলতো কান ও মাথার চামড়া রান্না। এভাবে তিন দিনে শেষ হয়ে যেত কুরবানি ঈদ উৎসব।

আমাদের সময় আমি চেষ্টা করতাম আলেমদের সাথে একত্রে কুরবানি দিতে। যথারীতি কুরবানি সম্পন্ন হলে আমি সহ দু’একজন তিন ভাগের একভাগ মিসকিনের জন্য রাখতে চাইলেও বেশিরভাগ ভাগিদার মোট গোস্তের কেউ সাত ভাগের এক ভাগ রাখতে চায় আবার কেউ বা মোটেও রাখতে চায়না। তখন আমি মেজরিটি কম থাকার কারণে চেপে যেতে হয়।

আমাদের সাত ভাগের ভাগিদারদের মাঝে একজন দুই ভাগে কুরবানি দেয়। এখানে তার মতামতের গুরুত্ব একটু বেশী দেওয়ার চেষ্টা করি আমরা। পরে জানতে পারি ওই পরিবারে চারজন চাকরিজীবী মিলে দুই নামে কুরবানী দেয়। তাদের সাথে দেওয়া কুরবানি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়েছে আল্লাহই ভালো জানে। যা হোক এখনকার কুরবানিতে মিসকিনি ভাগ ছোট হয়ে গেছে। কুরবানিস্থলে উপস্থিত না থাকলে রহিমার ছকিনার পর্দানশীল মায়েরা পলিথিন রেখে গিয়ে মিসকিনি ভাগ পায় না বললেই চলে।

কারণ হলো ফ্রিজ নামক গজব এসে মিসকিনের হক নিঃশেষ করে দিয়েছে। এখন মহিলারা তার নিকটা্ত্মীয় আগামী ঈদের কয়েকদিন আগে আসবে জেনেও তাদের জন্য গোশত ফ্রিজে রেখে দেয়। “এই কুরবানির গোশত পরের কুরবানীতে ঈদ করার সুযোগ পায়”। এই হলো বর্তমানের কুরবানী।

ব্যতিক্রম থাকলেও তা পারসেন্টেজে খুব খুব কম। অথচ কুরবানি এসেছে ত্যাগের মাহাত্ব নিয়ে। বিলিয়ে দেওয়ার আনন্দই হল কুরবানির প্রকৃত আনন্দ। অথচ আমরা দিনে দিনে তার ঠিক উল্টো রূপ ধারণ করছি।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে ত্যাগের মহিমায় চিরভাস্বর হয়ে কুরবানি গোশত গরিবের মাঝে বেশী বেশী বিলিয়ে দিয়ে প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করার তৌফিক দান করুন আমিন।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক
২১/০৭/২০২১



আরো




মাসিক আর্কাইভ