ঢাকার কাঁচাবাজারে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়ে চলেছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। যদিও দেশি রসুনে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও, বিদেশি রসুনের দাম প্রায় দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি জটিলতা ও সরবরাহ সংকটই এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ। তবে ক্রেতারা এর জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাবকেই দায়ী করছেন।
শনিবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে, মানভেদে কিছু দোকানি ৮৫ টাকাও চাইছেন। ভারতীয় পেঁয়াজের দামও প্রায় একই। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, প্রতিদিন বাজারে এসে নতুন দামের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
রসুনেও দেখা যাচ্ছে তীব্র পার্থক্য। দেশি রসুন মিলছে ১০০–১২০ টাকায়, আর বিদেশি রসুনের দাম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। দেশি আদা ১৪০–১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও, চীনা আদার দাম ২০০–২২০ টাকার ঘরে।
তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো, দেশি আলু এখনও ২২–২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বিক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন এবার ভালো হলেও, কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ায় তারা বাজারে কম দামে ছাড়ছেন না। ফলে পাইকারি দামে প্রভাব পড়ছে এবং সেই প্রভাব খুচরা বাজারেও গিয়ে পৌঁছাচ্ছে।
ভারতীয় পেঁয়াজের ক্ষেত্রে নিয়মিত আমদানি না হওয়ায় বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সীমান্ত বা বন্দরসংক্রান্ত জটিলতায় পণ্য আসা ব্যাহত হলে, সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয় এবং দাম বেড়ে যায়।
রসুন ও আদার বাজার প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ায়, আন্তর্জাতিক বাজার বা পরিবহন খরচে সামান্য পরিবর্তন হলেও তার প্রভাব পড়ে স্থানীয় দামে।
নিউমার্কেটের বিক্রেতা মজিবুর রহমান জানান, “দেশি পেঁয়াজ থাকলেও কৃষকরা বেশি দামে ছাড়ছে না। আর ভারতীয় পেঁয়াজ সব সময় আসে না, বন্দর জটিলতা থাকলে দাম লাফিয়ে ওঠে।”
আরেক বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিজেরা দাম বাড়াই না। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি, সেই দামে কিছু লাভ রেখে বিক্রি করি।”
নিত্যপ্রয়োজনীয় এই সবজির হঠাৎ এমন দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে তুলেছে। বাজারে আসা গৃহিণী সাইমা আক্তার বলেন, “রান্না করতে পেঁয়াজ লাগেই, না কিনে উপায় নেই। কিন্তু প্রতিদিন বাজারে খরচ বাড়ছে, মাস শেষে টান পড়ে যায়।”
ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “বাজারে এখনই কঠোর নিয়ন্ত্রণ দরকার। সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে চলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।”
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানায়, গত সপ্তাহে কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। আটা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, মসুর ডাল, চিনি ও ডিমের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, রসুন, লবঙ্গ, ব্রয়লার মুরগি এবং এমএস রডের দাম কিছুটা কমেছে। চা, লবণ এবং অন্যান্য মসলার দাম স্থির রয়েছে।