1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :

ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্তিমযাত্রা বনাম পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন

ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২ মে, ২০২১ ৫:০২ am

হাসান আল বান্না : বছর তিনেক আগের কথা। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের দ্বিতীয় হটস্পট হিসেবে খ্যাত বীরভূমের হোটেল বীরভূম ইন্টারন্যাশনালে উঠেছি। রাতের বীরভূম এই এক অনিন্দ্য সুন্দর জায়গা। রাজু হোটেলের বিখ্যাত কাঠালপাতায় বিরিয়ানি আমার খুবই পছন্দের। সফরসঙ্গী পশ্চিমবঙ্গের সিনিয়র সাংবাদিক বন্ধু পি. ব্যাণার্জী আর শিল্পপতি গৌতম দা। বীরভূমই বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ সীমানা। এরপরই হচ্ছে ঝারখণ্ড শুরু। এই বীরভূম হচ্ছে নন্দীগ্রামের পরবর্তী হটস্পট তৃণমূল – বিজেপির লড়াইয়ে। বীরভূমেই হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ তীর্থস্থান তারাপীঠ। যেমন বাংলাদেশের সিলেট শাহজালালের মাজার জিয়ারত হচ্ছে নির্বাচনের উদ্বোধনী কার্যক্রম ঠিক তেমনি তারাপিট হচ্ছে হিন্দুদের তীর্থস্থান। তারাপীঠের সোনারবাংলা হোটেল হচ্ছে ৫ স্টার মানের। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকদের নির্বাচনী বৈতরণী শুরু হয় তারাপীঠ মন্দিরের পূজোয় আর হোটেল সোনারগাঁও চত্বরের প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমেই অনেকটা শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী কার্যক্রম। তিনদিনের বীরভূম ঝাড়খন্ডের সফরে আমি হোটেলে রাতে ছিলাম এবং সকালে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়িতে উঠছি ঝাড়খন্ডের উদ্দেশ্যে। সামনে রাস্তায় দেখতে পেলাম হাফহাতার সাদা ধপধপে পাঞ্জাবী পরিহিত একজন মোটাসোটা ভদ্রলোক দুই হাত জোর করে নমস্কার দিচ্ছেন আর অভিবাদন নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের। আমিও তার নমস্কার গ্রহণ করলাম। গাড়িতে বসা বিশিষ্ট শিল্পপতি গৌতম দা জানালেন উনি অনুব্রত মন্ডল। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। যিনি হচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির জন্য মমতা দিদির পরেই দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিবারের নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী যাকে নজরবন্দী রাখেন। এবার গত একমাস ধরে পশ্চিমেবঙ্গের নির্বাচনে তিনটি আলোচিত ঘটনার মধ্যে একটি হচ্ছে বীরভূমে নির্বাচনে অনুব্রত মন্ডল কেন্দ্রীয় বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নজিরহীন হয়েছিলেন। আমি সাথে সাথে কলকাতার এক সাংবাদিককে ফোন করলাম তিনি বললেন অনুব্রত কেন্দ্রীয় বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারাপীঠের মন্দিরে গেছেন। আমি বললাম এই না হলো রাজনীতিক। আর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় আলোচিত ঘটনা হচ্ছে মমতা দিদির পা ভেঙ্গে যাওয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী অমতি শাহদের ঘন ঘন জনসমাবেশ। সবমিলিয়ে এবারের বৈশ্বিক মহামারীর মাঝে আমেরিকা জো বাইডেনের নির্বাচনের পরেই সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং গুরত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন।

ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য পশ্চিমবঙ্গের এবারের নির্বাচন গুরত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ দুইটি। প্রথমত. মমতা দিদির রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ছন্দপতন অথবা নব উদ্যমে উদ্ভাস আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে পুরো ভারতে বিজেপির ভাগ্য নির্ধারণ। এই দুইটির প্রথমটির ব্যাখা হচ্ছে, মমতা দিদির নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উত্থান হয় এরপর একযুগ ধরেই সেই উত্থান অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখালেও একটি অভিযোগ খুব ঘোরতর যেটা হচ্ছে, বিজেপির সাথে গোপন আতাঁত করে চলেন দিদি। কংগ্রেস বিরোধিতা করে পুরো ভারতে বিজেপির অবস্থান শক্তিশালী করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে এনআরসি বিল উত্থাপনের দিন তার সাংসাদের পাঠাননি এনআরসি বিরোধী ভেটো দিতে। তৃণমূলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের সাংসদ বানান দিদি বিভিন্ন ধরনের অভিনেতা – অভিনেত্রীদের যারা রাষ্ট্র বা গণতন্ত্রের জন্যই সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী! দিদির কারণেই উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিরোধী শক্তিশালী ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের কোমর ভেঙ্গেছে। যদিও বিরোধীদের এসব সমালোচনার জবাব সুস্পষ্টভাবে অফিসিয়ালী তিনি দেননি। যা বলেছেন রাজনৈতিক বক্তব্যের আলোকে। ফলে এসবের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত সুশীল ধর্মনিরপেক্ষ ভোটাররা দিদির বিষয়ে ভাবছেন ভালো ভাবেই। যার দরুন হয়তবা এবারের নির্বাচনের দিদির ছন্দপতন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দিদির সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় বিশ্ব ভারতীয় বাণিজ্য সম্মেলনে। এরপর আরো কয়েকটি প্রোগ্রামে। ভদ্র মহিলার মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে দৃঢ়তা দেখেছি তাতে উপরোক্ত অভিযোগ সত্য বলে আমার নিজেরও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এখন এই অভিযোগ সমূহ ভোটাররা কিভাবে দেখছেন তা প্রতীয়মান হবে আজকের ফলাফলে।

আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বিজেপির উত্থান। পুরো ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ২০ টি রাজ্য সরকার বিজেপির। কিন্তু তারপরও বিজেপির জন্য আগামীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন। এবারেও যদি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার মসনদে আসিন হয় মমতা তবে ধরে নেওয়া যাবে বিজেপির জন্য আগামী নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন অনিরাপদ। কারণ এই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে বিজেপি যারপরনাই প্রচেষ্টা চালায়নি। কথিত আছে, মুসলিম ভোট বিভক্ত করতেই হঠাৎ রাজনীতিতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ভাইজান আজ ভাইজান হয়েছেন বিজেপির আশির্বাদেই।

এবার শিরোনামে ফিরছি, কেন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন হতে পারে ভারতীয় রাজনীতির অন্তিম যাত্রা? এবারের নির্বাচনে বিজেপি ছাড়া প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের অভিযোগ হচ্ছে, ইভিএম নিয়ে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণ তো আছেই। যদি ইভিএম ম্যাকানিজমের কোন ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ঘটে থাকে আর তাতে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তবে তা হবে আগামীতে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য অন্তিমযাত্রা। কারণ ধরেই নেওয়া যাবে, এটা বিজেপির জন্য পাইলট প্রজেক্ট যা কেন্দ্রীয় নির্বাচনের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিজেপি ক্ষমতায় আসুক অথবা মমতা আসুক তবে তা হবে ভারতীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা। আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রত্যাশী…

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

 



আরো




মাসিক আর্কাইভ