যাচাই-বাছাই শেষ করে স্কুল ও কলেজের তালিকা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কোড নম্বর দেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালিকাটি চূড়ান্ত করে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন ২৩ এপ্রিল গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোড নম্বর দেয়া হবে। এই কোড নম্বর ছাড়া শিক্ষক ও কর্মচারীরা এমপিওর জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কোড নম্বর পাওয়ার পর শিক্ষকরা এমপিওর আবেদন করবেন।
গত বছর অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্রচুর ভুল ও তথ্যবিভ্রাট এবং অনেক প্রতিষ্ঠান অসত্য তথ্য দেয়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। শিক্ষাবোর্ডের সহায়তায় স্কুল ও কলেজের যাচাই-বাছাই শেষ করে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তবে, মাদরাসা ও কারিগরির কোনো খবর নেই অদ্যাবধি।
নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরই বেতন-ভাতা পাবেন বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা চলতি অর্থবছর থেকে বেতন ভাতা পাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন নয়। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সে কাজ শেষ হলেই শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাবেন। চলতি অর্থবছরেই নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাবেন বলে আশা করছি।’
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই স্কুল কলেজের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। ১ হাজার ৬৫০ টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হলেও সেখান থেকে কিছু স্কুল কলেজ বাদ পড়েছে।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার সাতশ ত্রিশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা ১ হাজার ৬৫১টি, মাদরাসা ৫৫৭টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫২২টি। ২ হাজার ৭৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে পাঁচ দফা শর্ত আরোপ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব শর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হবে।
শর্ত হিসেবে বলা হয়, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও বিএম এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী হবে। তবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়োগকালীন বিধি-বিধান সংশ্লিষ্ট পরিপত্র মোতাবেক প্রযোজ্য হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হয়েছে তার মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য যোগ্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে কাম্য যোগ্যতা অর্জন করলে স্থগিত এমপিও অবমুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
শিক্ষক নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার আগে অর্থাৎ ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চের আগে বিধি সম্মতভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন। তবে, পরবর্তী সময়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য অবশ্যই নিবন্ধন সনদ প্রযোজ্য হবে।
শর্ত হিসেবে আরও বলা হয়, যেসব তথ্যের আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, পরবর্তীতে কোনো তথ্য ভুল বা অসত্য হলে তথ্য দেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তথ্যের সঠিকতা সাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি আদেশ কার্যকর হবে।
নতুন এমপিওভুক্তির মধ্যে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩৯টি, ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০৮টি, ৯ম-১০ম শ্রেণির মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৮৭টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৬৮ টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯৩টি এবং ডিগ্রি কলেজ ৫৬টি। আর নতুন এমপিওভুক্ত মাদরাসার মধ্যে দাখিল মাদরাসা সংখ্যা ৩৫৮টি, আলিম মাদরাসার সংখ্যা ১২৮টি, ফাযিল মাদরাসা ৪২টি ও কামিল মাদরাসা ২৯টি। নতুন এমপিওভুক্ত কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষি ৬২টি, ভোকেশনাল স্বতন্ত্র ৪৮টি, ভোকেশনাল সংযুক্ত ১২৯টি, বিএম স্বতন্ত্র ১৭৫টি ও বিএম সংযুক্ত ১০৮টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এসএস