চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। আজ বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলছে।
সকাল থেকে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ভালো ভোট হচ্ছে। নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান করছেন ভোটারেরা। উৎসবমুখর পরিবেশ ভোট দিচ্ছেন সবাই।‘
এ সময় বিএনপির এজেন্টদের বের দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির এজেন্টরা কেন্দ্রেই যায়নি। বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন। এজন্য তারা এজেন্ট দিতে পারেনি।’
অন্যদিকে রেজাউল করিম চৌধুরীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বাকলিয়া বিএড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে বলে ভোট দেওয়ার আগে অভিযোগ করেন ডা. শাহাদাত হোসেন।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন নির্যাতনে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে।’ তবে, তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবেন বলে জানিয়েছেন ।
তবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও পরে কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাথরঘাটা ও লালখান বাজারে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে দুজন।
মেয়রপদে যাঁরা অংশ নিয়েছেন
আওয়ামী লীগ মনোনীত এম রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা), বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা এমএ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)।
নির্বাচনে ১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫৭ জন। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিম মৃত্যুবরণ করায় ওই পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসেন মুরাদ ইন্তেকাল করলে সেখানে আবদুল মান্নানকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ প্রার্থী।
উল্লেখ্য, পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষের আগে গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দলীয় মনোনয়ন পর্যন্ত সবই সম্পন্ন হয়। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মাত্র কয়েক দিন আগে স্থগিত করা হয় নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে বুথ চার হাজার ৮৮৬টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে আছেন ১৬ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা। সবাইকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এর মধ্যে রয়েছেন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা পাঁচ হাজার ৯০২ জন এবং পোলিং কর্মকর্তা ১০ হাজার ২৬৮ জন।
চসিক নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো সব কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ভোটের জন্য প্রস্তুত ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম। চার হাজার ৮৮৯টি বুথের জন্য একটি করে ইভিএম। এ ছাড়া দুটি কক্ষের জন্য একটি করে ইভিএম অতিরিক্ত আছে। আর ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিশেষ ব্যাকআপও রাখা হয়েছে।
সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ইভিএমের কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন। ভোটার নম্বর অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হবে। তারপর আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করার পর ভোটারের ছবিসহ পরিচয় পর্দায় ভেসে উঠবে। এরপর গোপন কক্ষে একজন ভোটার মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ তিনটি পদে ভোট প্রদান করতে পারবেন। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের ডান পাশে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। পরে সবুজ বোতাম চেপে ভোট নিশ্চিত করবেন।
ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিটি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম থেকে।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন