1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রয়োজন শক্তিশালী কূটনীতি

ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ১২:০১ am

রোহিঙ্গা সংকট মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মানুষের জীবন রক্ষার্থে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সৃষ্ট সংকট কেবল বাংলাদেশ-মায়ানমারের দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নয়। একই সঙ্গে তা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সংকট। এই সংকট সমাধানে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক আলোচনা ও উদ্যোগের পাশাপাশি দরকার বহুপক্ষীয় অংশগ্রহণ। সবমিলে ‘হাইব্রিড (মিশ্র) কূটনীতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করা প্রয়োজন।

সোমবার নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এবং সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের (সিপিএস) উদ্যোগে আয়োজিত এ ওয়েবিনারে সহযোগিতা করে ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশন।

‘রোহিঙ্গা সংকট: পশ্চিমা, এশীয় এবং দ্বিপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন এনএসইউর ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোইট প্রফন্টেইন, মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী তান শ্রী দাতো সেরি ড. সাঈদ হামিদ আলবার, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং এসআইপিজির সিনিয়র ফেলো রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক। ধন্যবাদ জানান সিপিএস সমন্বয়ক, ড. এম জসিমউদ্দিন এবং সঞ্চালনা করেন এনএসইউর সহকারী অধ্যাপক ডা. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা। আলোচনা সভাটি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট কেবল বাংলাদেশ ও মায়ানমারের জন্যই সমস্যা নয়, এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে একটি বড় উদ্বেগ। যার সমাধান হওয়া দরকার। মায়ানমারে বসবাসকারী সম্প্রদায়কে বৈষম্যমূলক ও শোষণ বন্ধ করার জন্য সে দেশের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি সমস্যার সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেলে তাদের উপর বার্মিজ বাহিনীর বর্বরতা দেখে একজন মানুষের হৃদয় ভেঙে যাবে। তবুও আমরা আশা রাখছি কূটনৈতিক পদ্ধতিতেই এ সমস্যার সমাধান হবে। আর এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ একা নয়। আমাদের সবার দায়িত্ব আছে।

এসময় তিনি জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন পর্যন্ত ৯৫১ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের সহায়তা বাংলাদেশের প্রতি আমাদেও দেশ অব্যাহত রাখবে।

কানাডার হাইকমিশনার বেনোইট প্রফনটেইন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে মায়ানমারে যা ঘটেছে তাতে কানাডার নাগরিকরা হতবাক। আমরা পুরো সময় জুড়ে দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে আছি। আমরা শুরু থেকেই পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলাম রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আমাদের কিছু করতে হবে।

কানাডিয়ান হাইকমিশনার আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বিশেষ কর্মী নিয়োগ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কী করা যায় তা বোঝার চেষ্টা করার জন্য আমি মায়ানমার এবং আরও কিছু দেশ ভ্রমণ করেছি। আমাদের উভয় দেশের ক্ষেত্রেই মানুষের মানবিক বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কানাডা সরকার যে বিষয়গুলোর উপর প্রাধান্য দিচ্ছে সেগুলোর অন্যতম হলো- মানবিক সমস্যা সমাধানে অবদান রাখা, মায়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখা, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও রোহিঙ্গাদের কণ্ঠ প্রসারের সুযোগ করে দেয়া।

ড. সাঈদ হামিদ আলবার বলেন, এশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশ। বিশ্বের ৬০ ভাগ জনগোষ্ঠী বাস এখানে। রোহিঙ্গা সংকট কেবল বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যকার সমস্যা নয়, এটি একটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকটও বটে। রোহিঙ্গা ট্র্যাজেডি কেবল মানবিক সংকটই নয়, এটি সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংস্থাগুলির হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, মায়ানমার আসিয়ানভুক্ত একটি দেশ। মায়ানমারের সঙ্কটের ক্ষেত্রে আসিয়ান ভূমিকা রাখতে পারেনি। ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে মায়ানমার সহায়তাও করেনি। তবে সময় এখনও আছে। সমস্যা সমাধানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি আঞ্চলিক উদ্যোগ দরকার। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চীন ও ভারতকে প্রয়োজন। এছাড়া আসিয়ান দেশগুলোর সমন্বয়ে বাংলাদেশ একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে পারে। এছাড়া এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সম্প্রদায়ও থাকতে পারে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যা বন্ধে আমাদের অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথমদিন থেকেই সঠিক পথে আছে। বিভিন্ন ইস্যুতে মায়ানমারকে সমর্থন করেছে। সেই ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘের যেকোনো রেজ্যুলেশনে সব সময় মায়ানমারের পক্ষে বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছে। সমস্যায় বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজেছে। আগেও দু’বার রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই পদ্ধতি সফল হয়েছে। কিন্তু এবার হয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যু মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট। মানুষের জীবন রক্ষার্থে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা নাগরিকদের সাময়িকসময়ের জন্য আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ভিকটিম হয়েছে।

তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ মায়ানমারকে প্রতিবেশিসুলভ সব আচরণ করছে। বারবার আকাশ ও ভূমির সীমা লঙ্ঘন করলেও বাংলাদেশ ধৈর্য্য ধরেছে। বাংলাদেশের ভূমি সেন্টমার্টিনস নিজেদের ম্যাপে প্রকাশ করে। যদিও ছয়মাস পর তা প্রত্যাহার করে মায়ানমার। তবে সব ইস্যুতে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সমাধান করেছে। এছাড়া আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মায়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি কে দু’বার বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমার শুরু থেকেই সময়ক্ষেপণ করে আসছে। সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। তারপরও বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করে যেতে হবে।

রোহিঙ্গা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ও নিরাপত্তায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কঠিন যে বাস্তবতা আমাদের মনে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে মায়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। সেদিক থেকে বাংলাদেশ মায়ানমারের প্রতি সব সময় এক আদর্শ প্রতিবেশীর মতো আচরণ করে এসেছে। কিন্তু অনেক সময়ই মায়ানমার সেই জায়গা থেকে বিচ্যুত ছিল। রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকে বাংলাদেশে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতে চেয়েছে। দু’বার আমরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সমর্থন করেছি। কিন্তু তারা তাদের দেশের মানুষদের ফেরত নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, ভাসানচর নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অসত্য তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সাগর থেকে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে আমরা উদ্ধার করে ভাসানচরে রেখেছি। সেখানে তারা ভালো আছেন। অন্য রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এর আগে সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি দেখানোর জন্য জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তিনি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয় আসা দরকার বলে মনে করেন।

অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, সরকার এবং শিল্পের জন্য নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে এবং যার ব্যবহারিক জীবনে প্রভাব রয়েছে এমন বিষয়ে গবেষণা করে থাতে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ড. জসিমউদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ প্রতিবেশী হিসেবে দ্বিপাক্ষিক যে উদ্যোগ ও কর্মপন্থা অনুসরণ করেছে তা বিশ্বেও কাছে সুস্পষ্ট। বিদ্যমান সঙ্কট মোকাবেলায় এখন দরকার হাইব্রিড কূটনীতি। হাইব্রিট বা মিশ্র কূটনীতি হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি একইসময়ে আঞ্চলিক এবং নিরপেক্ষ তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপ দরকার। এ ক্ষেত্রে যে নীতি-কৌশল তৈরি হবে সেখানে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চয়তা সংক্রান্ত একটি গ্যারান্টি থাকতে হবে। এটা যুক্ত করবে জাতিসংঘ। আফ্রিকার দেশসমুহে দি¦পাক্ষিক সঙ্কটে এ ধরনের হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্ত আছে।

ভিন্নবার্তা/এমএসআই



আরো




মাসিক আর্কাইভ