প্রাণঘাতী ভাইরাসঘটিত রোগ এইডসের (AIDS) বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর টিকা তৈরির পথে অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা রিয়া নভোস্তির বরাত দিয়ে রাশিয়া টুডে জানিয়েছে, এই প্রকল্প সফল হলে এটি হবে বিশ্বের প্রথম অনুমোদিত এইডস টিকা।
রাশিয়ার চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ইতোমধ্যে টিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মহামারিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ভ্লাদিমির গুশচিন জানিয়েছেন, এটি প্রস্তুত করা হচ্ছে সর্বাধুনিক mRNA প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সব ঠিক থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে টিকাটি বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
mRNA প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় শরীরে একধরনের প্রোটিন প্রবেশ করিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযুক্ত করে তুলতে। প্রচলিত টিকার মতো এতে জীবাণুর দুর্বল সংস্করণ ব্যবহৃত হয় না।
গুশচিন জানান, এই টিকার মূল উপাদান হবে একটি অ্যান্টিজেনিক তরল, যা মানবদেহে এইচআইভি প্রতিরোধে বিস্তৃত ইমিউন রেসপন্স তৈরি করবে। বর্তমানে ওই প্রতিষেধক তরল তৈরির কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, এইডস (AIDS) হলো হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। তখন সামান্য সংক্রমণও প্রাণঘাতী হতে পারে।
এই রোগ প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। সেসময়ই রোগটির কারণ হিসেবে এইচআইভি ভাইরাসকে চিহ্নিত করে দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা CDC। এইচআইভি মূলত সংক্রমিত হয় অনিরাপদ যৌন আচরণ, সংক্রমিত সুচ, রক্ত এবং মা থেকে নবজাতকের মধ্যে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে এইডসে মৃত্যু হয় প্রায় ১০ লাখ মানুষের। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোগটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জাতিসংঘের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লাখ, যা ২০১০ সালের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম।
এর আগে বিভিন্ন দেশ এইডস প্রতিরোধী টিকা তৈরির চেষ্টা করলেও তা সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
উল্লেখযোগ্য যে, গামালিয়া সেন্টারই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রথম অনুমোদিত টিকা ‘স্পুটনিক-ভি’ তৈরি করেছিল, যার কার্যকারিতা ছিল ৯৭ শতাংশের বেশি। এই টিকা বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে ব্যবহার হয়েছে।