1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :

মুক্তিযুদ্ধে আহত নারীর ব্রেইনে মর্টার শেলের টুকরো

ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১ ১:০৩ am

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে আহত হন এক নারী। সে সময় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা নেন এবং কাকতালীয়ভাবে বেঁচে যান। কিন্তু ব্রেনের ভেতরে রয়ে যায় মর্টার শেলের একটি টুকরো। সেই টুকরো নিয়ে তিনি এখনো বেঁচে আছেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা দরকার। তাকে ভালো চিকিৎসা করাতে সহযোগিতা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনাম।

তার পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-

‘প্রিয় মামুন,

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এক মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি হানাদার বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেল হামলার শিকার হন। তাঁরা উভয়েই সে যাত্রায় বেঁচে যান। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও দীর্ঘ ৫০ বছর ভদ্রমহিলা (বয়স-৭০) বাঁ পায়ে সামান্য দুর্বলতা ও আরো কিছু শারীরিক সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন।

গত বছর তিনেক যাবৎ ভদ্রমহিলার মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, ভুলে যাওয়া ও আচার-আচরণে সমস্যা (সাইকিয়াট্রিক প্রবলেম) দেখা দিতে থাকে। একদিন তিনি কীটনাশকও পান করে বসেন ভুলে যাওয়া ও আচরণের (সাইকিয়াট্রিক প্রবলেম) সমস্যা থেকে, যার জন্য পরে তাঁকে স্টমাক ওয়াশ করাতে হয়। শেষমেশ তাঁর সন্তানেরা তাঁর এই সাইকিয়াট্রিক চিকিৎসার জন্য আমার কাছে নিয়ে আসেন সপ্তাহ দুয়েক আগে।

আমি সতর্কতার সাথে তার এমএসই (মেন্টাল স্টেট এক্সামিনেশন) করি এবং সাইকিয়াট্রিক প্রবলেমগুলোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ইতিহাস নিই। আমার কাছে খটকা লাগে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মুক্তিযোদ্ধা মহীয়সী নারীর মর্টার শেলের হামলার বিষয়টি। এ সময় তিনি মাথায় কোনো আঘাত পেয়েছেন কি না এ ব্যাপারে বিশদ জানতে চাই। তিনি সেই ঘটনা সামান্য মনে করতে পারছিলেন। সে সময় মর্টার শেলের টুকরোগুলো তার শরীরের বাঁ পাশ ঝাঁঝরা করে দেয় এবং একটি টুকরা তার মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। সে সময় তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা নেন এবং কাকতালীয়ভাবে বেঁচে যান।

তাঁর মাথায় এই মর্টার শেলের টুকরার আঘাত এবং কয়েক বছর যাবৎ ব্রেইনে সমস্যা আমলে নিয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে তার ব্রেইনের একটা এক্স-রে করাতে পাঠাই। আমি যা অনুমান করেছিলাম সেটাই দেখতে পাই। এক্স-রে-তে তার ব্রেইনের ভেতরে মর্টার শেলের একটি টুকরার অবস্থান দেখা যায়! এ রকম ঘটনা অলৌকিক এবং বিস্ময়কর। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি বিরল।

গত ৫০ বছরে শেলের এই টুকরা তাঁর ব্রেইনের প্রায় অর্ধেক গলিয়ে ফেলেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘পরেনসেফালি’। (Porencephaly due to Encephalomalacia changes of cerebral hemisphere) তাঁর ব্রেইনের আরো কী কী ক্ষতি সাধিত হয়েছে এটা নিরূপণ করতে তাঁকে সিটি স্ক্যান অব ব্রেইন করি। সেখানেও দেখা যায় মর্টার শেলের টুকরা তাঁর ব্রেইনের প্রায় অর্ধেকখানি চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেছে এবং বিগত ৫০ বছরে তা আরো গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।

ব্রেইনের ভেতর মর্টার শেলের টুকরা নিয়ে ৫০ বছর বেঁচে থাকাটা সারা বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য বিরল ঘটনা এবং সাইকোটিক প্রেজেন্টেশন নিয়ে উপস্থিত হওয়াটাও চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত বিরল। এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি কেইস পাওয়া গেছে জার্নালে। (Psychotic Presentation of Porencephaly : the most rare condition of medical science)।

এই মহান নারীর এমন রোগ নিরূপণ করা এবং তাঁর চিকিৎসা করা নিশ্চয় সৌভাগ্যের এবং আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের, কেননা তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের জন্যই আমাদের একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পাওয়া। সেদিন তারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবন-মৃত্যুর তোয়াক্কা না করে সব কিছু পেছনে ফেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- যার জন্য এটা এখানে শেয়ার করা, বর্তমান মেডিসিন চিকিৎসায় তিনি খানিকটা সুস্থতা বোধ করলেও এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মহীয়সী নারীর নিউরোসার্জারি নিউরোসাইকিয়াট্রি বোর্ড সমন্বয়ে আরো ভালো একটি চিকিৎসা প্রয়োজন। এমনও হতে পারে, অপারেশন করে তার ব্রেইনের ভেতর থেকে মর্টার শেলের টুকরোটি বের করা এবং ব্রেইনের পচে যাওয়া অংশ যত দূর সম্ভব ওয়াশ-আউট করা। যা বেশ ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ বটে। সম্ভব হলে দেশে না হলে বিদেশে নিয়ে এই অপারেশন করা লাগতে পারে।

এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি অত্যন্ত অসচ্ছল। পরবর্তী এই আধুনিক চিকিৎসার জন্য তাঁর সহযোগিতার প্রয়োজন এবং এটা দ্রুত করতে হবে। আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মহোদয়কে এ ব্যাপারে জানানো উচিত। তিনিই পারবেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মহীয়সী নারীর পরবর্তী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। আপনারা যে কেউ উদ্যোগ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বার্তাটি পৌঁছে দিলে আমার মনে হয় সেটা সম্ভব হবে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়াউপজেলার ব্রাহ্মণবাজার গ্রামে।

ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি) এমফিল (সাইকিয়াট্রি), বিসিএস (হেলথ)
সাইকিয়াট্রিস্ট ও সহকারী অধ্যাপক
সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ।
ইন্টারন্যাশনাল ফেলো : আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন।
drsaayedinam@yahoo.com’

 

ভিন্নবার্তা ডটকম/পিকেএইচ



আরো




মাসিক আর্কাইভ