পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মানাসলু (৮,১৬৩ মিটার) জয় করেছেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী তৌফিক আহমেদ তমাল। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত ৩ টায় নেপালের স্থানীয় সময় তিনি বিশ্বের প্রাণঘাতী পর্বতগুলোর একটি মানাসলুর শীর্ষে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডু থেকে যাত্রা শুরু করে কঠিন আবহাওয়া, তীব্র শীত আর বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এই গৌরব অর্জন করেন। অভিযান পরিচালনা করে নেপালের খ্যাতনামা পর্বতারোহণ সংস্থা ‘সেভেন সামিটস’। বর্তমানে তিনি নিরাপদে ক্যাম্প–৪-এর পথে নেমে আসছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযানের বাংলাদেশ সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আল মুহিত।
মুহিত বলেন, “তমালের এই সাফল্য কেবল তার একার নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের অর্জন। তার একাগ্রতা, সাহস ও দীর্ঘ প্রস্তুতি আজ সার্থক হয়েছে। আমরা গর্বিত এবং তার নিরাপদে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি।”
তৌফিক আহমেদ তমাল গত ১৪ বছর ধরে দেশ-বিদেশে নিয়মিত ট্রেকিং ও উচ্চ পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এর আগে তিনি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মিটার উচ্চতার সাতটি এবং ৬৫০০ মিটারের দুটি পর্বত জয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শীতকালীন অভিযানে থার্পু চুল্লি জয়, ভাগীরথী–২ (৬৫১২ মিটার) জয় এবং গত বছর বিশ্বের অন্যতম কঠিন শৃঙ্গ মাউন্ট আমা দাবলাম (৬৮১৪ মিটার) আরোহণ।
মানাসলু তার প্রথম ‘আট-হাজারী’ শৃঙ্গ হলেও এর বিশেষত্ব হলো—এই অভিযানে তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বা করপোরেট অর্থায়ন নেননি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই কঠিন শৃঙ্গ জয় করে তিনি বাংলাদেশের পর্বতারোহণ ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই অভিযানের আগে বাংলাদেশি প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার তাকে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। আয়োজকরা জানান, তরুণ প্রজন্মকে পর্বতারোহণের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা জানাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, মানাসলু পশ্চিম-মধ্য নেপালের মানসিরি হিমালে অবস্থিত। সংস্কৃত শব্দ ‘মনসা’ থেকে নামটির উৎপত্তি, যার অর্থ ‘বুদ্ধি’ বা ‘আত্মা’। তাই মানাসলু মানে দাঁড়ায় ‘আত্মার পর্বত’। ১৯৫৬ সালে জাপানি পর্বতারোহী তোশিও ইমানিশি এবং গ্যালজেন নরবু প্রথম এই পর্বতের চূড়ায় পৌঁছান। উচ্চতায় এটি অষ্টম হলেও, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী পর্বতগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।