বিশেষ প্রতিবেদক: একজন প্রদীপ কুমার বসু। তিনি এখন গণপূর্ত অধিদফতরের ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। ঠিকারদারকে সঙ্গে যোগসাজশে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। কিছু কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর প্রদীপ কুমারকে শাস্তিও পেতে হয়। তার বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ রয়েছে সেই সব অভিযোগ তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়। বিধি অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারির বিরুদ্ধে লঘু দণ্ড কার্যকর করা হলে ওই দণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পার না হওয়া পর্যন্ত তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। কিন্তু তিনি দণ্ড গোপন রাখতে ও বিধি বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি নিতেও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। প্রদীপ কুমারের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অনেক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। সব শেষ প্রদীপ কুমার বসু’র তার আপন ভাই (সহোদর) প্রশান্ত কুমার বোস গত ২২ মে ২০২২ তারিখে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে।
দুদক বরাবর লিখিত অভিযোগে প্রদীপ কুমার বসুর ভাই প্রশান্ত কুমার বোস জানান, মাগুরায় দায়িত্ব পালনকালে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ উপায়ে মোটা অংকের সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে প্রদীপ কুমার বসু’র বিরুদ্ধে। তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়। পরে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর বিধি ৪ এর ২(বি) উপ-বিধি অনুযায়ী লঘু দণ্ড প্রদান করা হয়। এরপর দণ্ডের তথ্য গোপন রেখে কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য বুঝিয়ে পদোন্নতি নেন তিনি। প্রদীপ কুমার বসু গোপালগঞ্জের উপ-বিভাগী প্রকৌশলী থাকাকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবজ্ঞা করা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের মাজারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের কারণে সেই সময় তাকে লঘু দণ্ড হিসেবে সতর্ক হয়।
দরপত্র মূূল্যায়ন ও ম্যানুপুলেশনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ এর পিএ কমিটির ১২তম বৈঠকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। মনির হোসেন ওরপে গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে যোগসাজশে স্বর্ণ চোরা চালান, রাজউক ও গণপূর্ত অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে ভূমি দখল, দুই শতাধিক প্লট ও হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন এবং মানি লন্ডারিং সহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করা হয়, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
ঢাকা গণপূর্ত মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব পালন অবস্থায় প্রদীপ কুমার বসু’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এজন্য তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ এর উপ-বিধি (খ) অনুযায়ী বিভাগী মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তিনি এই মামলা দায়েরকে বাধাগ্রস্ত করতেও অত্যন্ত সু-কৌশলে দুর্নীতির আশ্রয় নেন।
কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ওপর লঘু দণ্ড আরোপ করা হলে তিনি তার শাস্তি ভোগ করার মেয়াদ শেষে এক বছর পার না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। কিন্তু প্রদীপ কুমার বসুর ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। তার দণ্ডের মেয়াদ শেষ না হতেই তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে তার বিরুদ্ধে যেখানে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। তার বিরুদ্ধে করা সংসদীয় কমিটির সুপারিশও থামিয়ে দেন তিনি। ফলে ওই সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি। প্রদীপের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের এখনো তদন্ত করছে দুর্নীতি কমিশন দুদক। অথচ এ অবস্থায়ও প্রদীপ কুমার সব কিছুকে চাপা দিয়ে পদোন্নতি ভাগিয়ে নিয়েছেন। এখন তার টার্গেট হচ্ছে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর পদ দখল করা। আর এ জন্য লুটপাট করে অর্জন করা কোটি কোটি টাকার থেকে বড় একটি অংশ ব্যয় করছেন আলোচিত এই প্রদীপ কুমার বসু।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন