খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় করা মেডিকেল পরীক্ষায় যৌন সহিংসতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল বোর্ড।
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড ভুক্তভোগী কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানায়, ধর্ষণের পরিচিত ১০টি শারীরিক সূচকের কোনোটিই পাওয়া যায়নি। বোর্ডের নেতৃত্বে থাকা গাইনী কনসালটেন্ট ডা. জয়া চাকমা বলেন, “পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী শারীরিকভাবে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ মেলেনি।” তার সঙ্গে প্রতিবেদনটিতে স্বাক্ষর করেছেন ডা. মীর মোশারফ হোসেন ও ডা. নাহিদা আক্তার।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. ছাবের আহমেদ জানান, মেডিকেল প্রতিবেদনটি পুলিশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় ওই শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরদিন ভুক্তভোগীর বাবা তিনজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ ২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এক যুবক শয়ন শীলকে (১৯) গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনার পর পাহাড়ি এলাকা জুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। জুম্ম ছাত্র ও সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধ আহ্বান করা হয়, যা প্রশাসনের অনুরোধ এবং দুর্গাপূজাকে ঘিরে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি সেনানিবাসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফ এই ঘটনাকে ঘিরে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে চায়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ, যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
গুইমারা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কালাম রানা অভিযোগ করেন, পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র তৎপরতার পেছনে ইউপিডিএফ সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি সংঘটিত সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বহু স্থানীয় বাসিন্দা আহত হয়েছেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক সরকারি স্থাপনা, দোকানঘর, গুদাম, বসতবাড়ি এবং মোটরসাইকেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।