1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :
সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ

কি লাভ হলো বিএনপির!

ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৩ ৭:০০ pm

বর্তমান সংসদকে অবৈধ দাবি করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে পাকাপোক্ত করতে সংসদ থেকে এমপিদের পদত্যাগের পর চাপা ‘আফসোসে’ ভুগছে বিএনপি। নেতারা কেউ বলছেন সময়টা মোক্ষম ছিলো না। আন্দালন আরো পোক্ত হলে পদত্যাগে রাজনৈতিক ফল আসতো। কারো উপলব্ধি- পদত্যাগের মাধ্যমে দল ‘ব্যাকফুটে চলে’ গোলো। বিশেষ করে পদত্যাগ করেও ফের উকিল আব্দুস সাত্তার উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে বিব্রত বিএনপি।

বিএনপির নির্ভরযোগ সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে সাংসদদের পদত্যাগের কোনো বিকল্প ছিল না। সমাবেশ থেকে যদি এই পদত্যাগের ঘোষণা না আসত তাহলে নয়াপল্টনে ‘যে কোনো মূল্যে’ সমাবেশ করা নিয়ে সরকারের উদ্দেশে ছুড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জ থেকে বিএনপির পিছু হটার বিষয়টি বেশি আলোচিত হতো; যা দলটির ‘উজ্জীবিত’ নেতাকর্মীদের জন্য এক ধরনের হতাশা বয়ে আনত। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে বিএনপি যে একটা বড় ট্রাম্প কার্ড ছোট উদ্দেশ্যে খেলে দিল, তা কি তারা বুঝতে আত্ম অনুশোচনায় ভুগছে।

তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে রজি নন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ভিন্ন বাতাকে বলেন, রাজনীতিই তো রাজনীতির জায়গায় এখন নাই। যে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব‘ এক সের বেগুনে দুই সের লবন দিমু তাতে কার কি বলার আছে?’ সেই সংসদে থাকা না থাকা সমান। বিএনপির সংসদরা যখন শপথ নেন তখনও নানা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিলো; এখানো হচ্ছে আমরা এসবের ধার ধারি না। আমাদের একটা দাবিও সরকার পূরণ করেনি, করবেও না। তাহলে ওই বদ্ধ বাকসে কথা বলে কি লাভ? বিএনপির জন্য জনগণের দুয়ার খোলা।

রাজনৈতিক বশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধী শিবিরে বাড়তি টনিক তৈরির জন্য বিএনপি সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ গুরুত্বপূর্ণ। সেই টনিক সৃষ্টি হতে পারত সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তাপ তৈরি হলে। তখন এ ধরনের একটা ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিসরেও আলোচনার জন্ম দিতে পারত। কিন্তু এখন এমন এক সময় যখন রাজপথের উত্তাপ তো দূর স্থান, বিএনপি শিবিরে চলছে বিগত কয়েক মাসের ‘বিনিয়োগের’ লাভ-ক্ষতির হিসাব। আন্দোলনের কিছুটা হলেও ভাটার সময়ে বিএনপি সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ আন্দোলনকেও উজ্জীবীত করতে পারবে বলে মনে হয় না।

জানতে চাইলে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ড. হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপির অল্প কয়েকজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলেও চলমান সংসদ কোনো সংকটে পড়বে না। কারণ আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাছাড়া বিএনপিও এমন সিদ্ধান্তে লাভবান হবে না। কারন, সংখ্যায় অল্প হলেও সাংবিধানিক ভাবে তাদের কথা বলার একটি প্ল্যাটফর্ম ছিলো পদত্যাগ করে এই সুযোগটিও তারা হারিয়েছে। তিনি বলেন, এটি ছিলো বিএনপির হটকারী সিদ্ধান্ত। দায়িত্বহীনতা, আদর্শিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে তারা। এটিই বিএনপির রাজনৈতিক অপরিপক্কতার নজির বিহীন দৃষ্টান্ত।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ক্ষেত্রে সংসদে সংখ্যায় কম হলেও বিএনপির সংসদ সদস্যরা যেভাবে তৎপর ছিলেন, তারও একটা বড় অবদান আছে বলে আমার মনে হয়। আমি বলতে চাচ্ছি, সরকারকে টক্কর দেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি সংসদের বাইরে তো বটেই ভেতরেও ভালোই ভূমিকা রাখছিল। পদত্যাগের কারণে বিএনপি একটা ফ্রন্ট হারাল।

গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশে সংসদ সদস্য পদ থেকে একে একে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাত সংসদ সদস্য। এই সাত এমপি হলেন— ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৬ আসনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে রুমিন ফারহানা।

বিএনপি এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিবে এমন পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৯ অক্টোবর দলের রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার সময় বলেছিলেন, তাদের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছেন। দলটির প্রত্যাশা ছিলো ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে এমন চাপ সৃষ্টি করা হবে যাতে সরকার পতন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ওই মূহের্ত সাংসদদের পতত্যাগের ঘটনায় ক্ষমতাসীন শিবিরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। অবশেষে সরকারের কৌশলের কাছে পরাস্ত হয়ে কারণে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ প্রয়োজনীয় ও প্রত্যাশিত উত্তাপ তৈরিতে ব্যর্থ হলে বিএনপির উপলব্দি হয় তড়িঘরি করে সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের সময়টা মোক্ষম ছিলো না। দলটির সিনিয়র নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, সংসদ থেকে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে কোনো প্রত্যাশা-প্রাপ্তি না হওয়ায় দলে হতাশা এসেছে। কারও কারও ব্যাখ্যা কোনও মোমেন্টাম’ তৈরি না করে অনেক আগেই পদত্যাগ করায় ফল উল্টো হয়েছে।

নেতারা অনেকেই বলছেন, সরকারের বিভিন্ন বাধা ডিঙিয়ে একে একে নয়টা বিভাগীয় সমাবেশ সফল করার মাধ্যমে বিএনপি শুধু মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা সামাজিকমাধ্যম নয়, জনপরিসরেও বেশ আলোচনা ও কৌতূহল তৈরি করতে পেরেছিল; এতে প্রতিপক্ষ তথা শাসক মহলেও কিছুটা হলেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জন্ম নিয়েছিল। বিএনপি বলছে, ডান-বাম মিলিয়ে বহু বিরোধী দলকে তারা অচিরেই এক ছাতার নিচে না হোক অন্তত যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। দলটির নেতাদের বক্তব্য অনুসারে, এ আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁরা সরকারকে ‘উৎখাত’ করবেন; অর্থাৎ বিএনপির পক্ষে রাজপথে উত্তাপ তৈরির অবকাশ এখনও আছে। সে রকম পরিস্থিতি’তিই হতে পারত দলটির সংসদ সদস্যদের সংসদ ত্যাগের মোক্ষম সময়।

একই কথা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও। তাদের মতে- বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ যদি আন্দোলনের তুঙ্গ মুহূর্তে হতো, তাহলে আবেদন ও প্রভাব বেশি হতো। কারণ, পদত্যাগ-ধরনের কর্মসূচি যেকোনও আন্দোলনের তুঙ্গ মুহূর্তে আসে। এরপর সর্বাত্মক কর্মসূচি আসার কথা। কিন্তু পদত্যাগ সময়োচিত হয়নি। তারা পদত্যাগের কার্ডটিকে আরো ভালোভাবে ব্যবহারের সুযোগ বিএনপির সামনে ছিল।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা বরাবরই বলে এসেছি, এই সংসদ অবৈধ সংসদ। আমরা স্ট্রাটেজিক কারণে সংসদে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন মনে করেছি, আর প্রয়োজন নেই, তখনই আমাদের সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। এমপিদের এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি লাভবান হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতারাই নন পদত্যাগ করে আফোসোস পিছু ছাড়েনি ৭ এমপির। তবে প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলেছেন না। এর মধ্যে পদত্যাগী এমপিদের মধ্যে উকিল আব্দুস সাত্তার ভিন্ন। তিনি পদত্যাগ করে আবারো উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দল থেকে বহিষ্কারও হয়েছেন ইতোমধ্যে। ২০১৮ সালে তার মনোনায়ন প্রাপ্তি ও পদত্যাগের পর আসন্ন উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সরকার বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগকে বিতর্কিত করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। শনিবার (৭ জানুয়ারি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সভায় বিশেষ তিনি বলেন, আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের একটি চাপ আছে তার ওপর। সরকার যে কোনোভাবে আমাদের পদত্যাগকে বিতর্কিত করতে চায়। সরকার সেটা সফলভাবে করেছে। তাকে চাপ দিয়ে এই নির্বাচনে আনা হয়েছে।

অন্যদিকে উকিল আব্দুস সাত্তারের উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে তার ছেলে তুষার বলেন, দল বর্তমানে তার ( আব্দুস সাত্তার) খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দলীয় গুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্দ নিতে উনাকে ডাকছেন না। কিছু জিজ্ঞেস করছেন না। দলের কর্মকান্ড মনে হচ্ছে তার আর প্রয়োজন নেই। তাই তিনি নিরিবিলি থাকাটাই শ্রেয় মনে করেছেন। তাই পরিবারসহ সকল আত্মীয় স্বজনের সাথে পরামর্শ করেই দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

তবে দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক নেতার সন্দেহ-ভোকাল’ হওয়ার কারণে হারুনুর রশীদ বা রুমিন ফারহানার বিষয়ে ঈর্ষান্বিত মহলটি এক্ষেত্রে একটি অবস্থান তৈরি করেছে। দলের এই অংশটি সংসদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন। একইসঙ্গে জামায়াতের একটি পক্ষও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে উৎসাহিত করেছে সংসদ থেকে এই সুযোগে দলের এমপিদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দলের নেতৃত্ব শতভাগ নিশ্চিত করা সহজ হবে। সরকার চাপে পড়বে।

বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসা বিএনপি নেতা জিএম সিরাজ বলেন, এতদিন তো আমাদের কয়েকজন সংসদে থাকায় জনগণ আমাদের কথা শুনতো। এখন যারা সংসদে আছেন, তাদের কথা সংসদের চার দেয়াল শুনবে। এখন শোনার লোক নাই। তিনি বলেন, আমরা যে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছি এটা নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে অনেক আলোচনা রয়েছে। তবে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত দলের পক্ষ থেকে হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত ভালোভাবে দেখছি।

রাজপথের আন্দোলনকে গতি দিতে সংসদ থেকে দলীয় সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ দেশে এ প্রথমবার ঘটল তা নয়। এর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৯৪ সালে এ অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে সংঘটিত ওই গণপদত্যাগ লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছিল। সম্ভবত সেই উদাহরণ থেকেই বিএনপি এবার একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সংসদের সব বিরোধী দল এক হয়ে আন্দোলন করছিল; সংসদ থেকে পদত্যাগেও তাদের সবাই ‘১৪৭ জন’ একতা দেখিয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালের পদত্যাগ জনমনে যে ইমপ্যাক্ট তৈরি করেছিল, সংখ্যার দিক থেকে তো নয়ই, পরিস্থিতি বিবেচনায়ও বিএনপি সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ তার ধারেকাছে যেতে পারেনি।

ভিন্নবার্তা ডটকম/আরজে/এন



আরো




মাসিক আর্কাইভ