বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যে এবারও সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে দেশবাসী। ঈদে প্রতি বছর যে উৎসবের আমেজ থাকে, গতবারের মতো এবার তা অনুপস্থিত।

ঈদ মানে আনন্দ, অথচ করোনার কারণে সেই আনন্দই বহুলাংশে ম্লান হয়ে গেছে এবার। বিশেষ করে করোনায় এ পর্যন্ত ১২ হাজারেরও মানুষের মৃত্যু দেশবাসীকে আতংকিত করেছে।

ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হলেও বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ নামাজ নিজেদের বাসস্থানেই পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ঈদগাহে ঈদের জামায়াতের মতো এমন আনন্দ চার দেয়ালের মসজিদে পাওয়া যায় না।

গতবারের মতো এবারও ধর্মমন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলির মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতবারও এ অনুরোধ জানানো হয়েছিল-কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এ বিষয়টি মানেনি।

এবারের ঈদ বেশিরভাগ মানুষ ঘরেই উদযাপন করছেন। তবে সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা সরাসরি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও অনেকে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পর কুশল বিনিময় করছেন, আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। বস্তুত করোনার কারণে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ উদযাপন চিত্র ছিল প্রায় অভিন্ন। এবারও সবাই ভিন্ন রকম পরিবেশে ঈদ উৎসব পালন করছেন।

স্বাস্থ্যবিধিতে শরিয়তের বিধানের কোনো বিরোধ নেই
শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে সরকার যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলেছে তার সঙ্গে শরিয়তের বিধানের কোনো বিরোধ নেই। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করবেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করতে হবে। আল্লাহ সহায় হলে এ মহামারি একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। যেহেতু এবারের ঈদেও করোনার প্রকোপ রয়েছে সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি তো মানতেই হবে। আমাদের আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে, দুর্যোগের মেঘ কেটে গেলে আগের মতোই ঈদ উৎসব উদযাপন করতে পারব।

এবারের ঈদের চাঁদ নিয়ে উত্তেজনা কেন কম ছিল
প্রতিবছর চাঁদ নিয়ে একটা উত্তেজনা থাকে। নানা কৌতুহল থাকে ঈদের চাঁদকে ঘিরে। কিন্তু এ বছর সেই কৌতুহল অনেকাংশেই কমে গিয়েছিল। কারণ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সৌদি কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্সের সদস্য এবং দেশটির রয়্যাল কোর্টের উপদেষ্টা শেখ আবদুল্লাহ বিন আল ম্যানিয়া বলেছেন, সৌদি আরবে এ বছর পবিত্র রমজান মাস ৩০ দিনের হবে।

জ্যোতির্বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে সৌদি আরবে এবারের ঈদের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটলো। এতদিন ধরে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করেই ঈদের তারিখ নির্ধারণ করা হতো সেখানে।

যেহেতু সৌদি আরবের পরদিন বাংলাদেশে ঈদ হয়, সেহেতু বাংলাদেশের ঈদ শুক্রবার হবে-এ সমীকরণটাই সবার সামনে ছিল। এজন্য চাঁদ নিয়ে কৌতুহল অন্য বছরের তুলনায় অনেকাংশে কম ছিল।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এসএস