স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে সারাদেশে যে ৮৮৯ জন মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট ও ১৮০০ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিলো তা অবশেষে বাতিল করা হয়েছে। গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রশাসন-১ অধিশাখার উপসচিব আনজুমান আরা’র স্বাক্ষরে জারিকৃত এক চিঠিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে যে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার পদে নিয়োগের দুর্নীতির বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে তদন্ত করার জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মাননীয় মন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার পদে জনবল নিয়োগের বিষয়ে নিন্মোক্ত নির্দেশনা প্রদান করেছেন: “যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদনে লিখিত পরীক্ষার খাতায় অস্পষ্টতা পাওয়া গেছে মর্মে উল্লেখ রয়েছে সেহেতু বর্ণিত নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলপূর্বক পুনরায় নতুন নিয়োগ স্বল্প সময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক। ইতপূর্বে যারা আবেদন করেছেন তাদেরকে নতুনভাবে আবেদনের প্রয়োজন নেই; তারা নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।”
চিঠিতে বলা হয়, “এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার পদে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর এই চিঠিটি ইস্যু করা হয়।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যখাতে লোকবলের অপ্রতূলতা সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। বিশেষ করে মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের অপ্রতূলতায় মহাসংকট সৃষ্টি হয়। করোনা মোকাবেলায় শুরুতেই প্রয়োজন হয় ব্যাপকহারে করোনা টেস্ট। কিন্তু টেস্ট যারা করবে সেই টেকনোলোজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের নিয়োগ হচ্ছিলো না দীর্ঘদিন। ফলে এমনিতেই লোকবলের ঘাটতি ছিলো। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট ৮৮৯ জন এবং মেডিকেল টেকনিশিয়ান ১৮০০ জন নিয়োগের জরুরি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ সেই জরুরি নিয়োগ দীর্ঘ দেড় বছরেও শেষ করা যায়নি ভয়াবহ দুর্নীতি-জালিয়াতির কারণে। লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আটকে ছিলো গত প্রায় ৬ মাস ধরে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির-জালিয়াতির অভিযোগ উঠে। খোদ নিয়োগ কমিটিরই দু’জন সদস্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন সুনিদিষ্ট তথ্যপ্রমাণসহ। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা দুর্নীতি-জালিয়াতির অভিযোগ তোলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাধ্য হয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান এর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় গত ১৩ এপ্রিল, ২০২১। ওই তদন্ত কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হলেও কমিটি প্রায় ৫ মাস পর রিপোর্ট দাখিল করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাবেক এপিএস আরিফুর রহমান এবং অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আর এ কারণেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা যাচ্ছিলো না। গণমাধ্যমে এই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অবশেষে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত এপিএস আরিফ এবং পরিচালক (প্রশাসন) হাসান ইমামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এসএস
Editor: Rumana Jaman Shachi
Raipura House (2nd Floor), 5/A, Outer Circular Road
West Malibag, Dhaka-1217
Communication
E-mail: vinnabarta@gmail.com
Phone:+8802222220051