1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :
যুগপৎ আন্দোলন

সন্দেহ অবিশ্বাসে বিরোধী মঞ্চে ফাটল

ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ৬:১২ pm

নুসরাত নীরা : মাঠের চেয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বেশি মনোযোগ। কর্মসূচি পালনের চেয়ে দফা ঠিক করা নিয়ে প্রতিযোগিতা বেশি। নিজেদের অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্টি, মতপার্থক্য, সন্দেহ, অবিশ্বাস, শঙ্কা জেঁকে ধরেছে বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ‘ওয়ানম্যান শো’ নেতাদের। এসবের জেরে ফাটল ধরেছে ঐক্যে। জট লাগছে আন্দোলনে। আর বিএনপির নেতারা বলছেন, এত বড় আন্দোলনে উত্থান-পতন থাকবেই। যারা শেষ পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকতে পারবে তাদের নিয়েই নির্বাচনী বৈতরণি পাড়ি দেবে বিএনপি।

জোটে নানা অনিয়ম আর অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে গত শনিবার যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের জোট থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ। তবে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন এ দলটি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে জোটবদ্ধ কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ না থেকে গণ অধিকার পরিষদের নিজস্ব উদ্যোগে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে থাকা এবং সব দলের সঙ্গে রাজপথে সমন্বিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের বেশ কয়েকটি বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা অনুপস্থিত ছিলেন। গণতন্ত্র মঞ্চের ইফতার পার্টিতে বক্তব্য দিতে নুরুল হক নুর ও রেজা কিবরিয়াকে একাধিকবার মঞ্চে ডাকা হলেও তারা যাননি। বিএনপির সঙ্গে সর্বশেষ গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকেও গণ অধিকার পরিষদের কোনো নেতা ছিলেন না।

সূত্র জানায়, ব্যক্তি ও দলীয় পর্যায়ে সমমনা এই দলগুলোর নেতারা একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। নুরুল হক নুরের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড মঞ্চকে বিব্রত করেছে। এমনকি, তিনি মঞ্চের সিনিয়র নেতাদের মানতেন না। তাকে অনেকবার সতর্ক করা হলেও নিজেকে না সামলে সার্বক্ষণিক জোট ভাঙার চেষ্টা করেছেন।

মঞ্চের একাধিক শীর্ষ নেতার দাবি, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ইশারায় নুর এসব করছেন। মূলত বিরোধীদের চলমান আন্দোলনকে ব্যাহত করার অংশ হিসেবে তারা নুরকে ব্যবহার করছেন। এর আগেও দুবাইয়ে সাফাদিকারের বিষয়ে মঞ্চ ব্যাখ্যা চাইলে নুর বের হতে চেয়েছেন, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়।

মঞ্চের অন্য নেতারা দাবি করছেন, গণঅধিকারের চাহিদামতো তাদের সবকিছুতে বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়েছে। গত কর্মসূচিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। সুতরাং মঞ্চ ভাঙার জন্য এগুলো কোনো কারণ হতে পারে না। অন্য দলগুলো যেসব সুবিধা পায়, গণ অধিকার তার থেকে ঢের বেশি সুবিধা পায়। নুর মূলত দলে তার প্রভাবকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছেন।

অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদ নেতাদের অভিযোগ, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অনেক দল সরকারের কাছ থেকে টাকা এনে কর্মসূচি করেন। তাছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ যে কোনো কর্মসূচির দিনক্ষণ আমাদের সঙ্গে আলাপ ছাড়াই নিজেদের মতো করেন। এমন নানা অসঙ্গতির কারণে আমরা মঞ্চ ছেড়ে আলাদাভাবে যুগপৎ আন্দোলনে একাত্ম থাকব। তবে পরিষদ নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চকে। তাদের সঙ্গে দফারফা করতেই বেশ সময় যাচ্ছে।

এদিকে জোটের ভেতর ছোট দলের বড় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে বিব্রত বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, গত নির্বাচনের আগেও আমাদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট ছিল। সেখানে এতটা সমন্বয়হীনতা ছিল না। জোটে যারা আন্দোলনের শরিক আছেন সবাইকে

ধৈর্য ধরে সমন্বিতভাবেই জোটে থাকতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হলে দৃঢ় রাজনৈতিক ঐক্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তারা এও বলছেন, বর্তমান আস্থার সংকট কেটে যাবে। সরকার পতন আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত যারা থাকবে, তাদেরই মূল্যায়ন করা হবে জাতীয় সরকারে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দাবি- আন্দোলন করার সময় কর্মসূচির মধ্যে কিছুটা সমন্বয়হীনতা থাকতে পারে। সরকার পতনের এ আন্দোলনে যারা সরাসরি অংশ নেবে, তাদের সবাইকে নিয়ে আগামী দিনে যে সরকার গঠন করা হবে, সেখানে সবার ভূমিকা থাকবে। মাঠে থাকা সব শরিকের মতামত নিয়ে আন্দোলনে নতুনমাত্রা দিতে খুব শিগগিরই যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, রাজনীতিতে কিছু মতবিরোধ হওয়াটা স্বাভাবিক। ভিন্নমত আসবে। অনেকেই ছেড়ে যাবে। আমরা আলোচনা করব, সমাধান করব। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রথম দিকে অনেক জোট ও দল এক হয়েছিল। তারা থাকতে পারেনি। আগামীতে আরো অনেকে হয়তো যাবে। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনের মাঠে যারা টিকে থাকতে পারবে তাদের নিয়েই বিএনপি পথ পাড়ি দেবে। দিন যত যাবে জোটের ভিত্তি তত মজবুত হবে।

জোট ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, জোটগত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে মতানৈক্য ছিল। যা দিন দিন গাঢ় হচ্ছিল। এমন অবস্থায় আমাদের জোট ছাড়াটাই একমাত্র উপায় ছিল। তাছাড়া আমি মনে করি, জোটের চেয়ে একক কর্মসূচিতে গেলে আন্দোলন ভালো হয়। জোটগত কর্মসূচিতে সবারই একটা গা-ছাড়া ভাব থাকে। গণতন্ত্র মঞ্চে থাকি বা না থাকি আমরা যুগপৎ আন্দোলনে থাকব।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, অনেক দিন ধরে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের টানাপড়েন চলছিল। কোনো সংগঠন যদি মনে করে, তারা মঞ্চে থাকবে না, সে অধিকার তাদের রয়েছে। তবে সরকার বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে বিভক্তির যে চেষ্টা চালাচ্ছে, গণ অধিকার পরিষদের সিদ্ধান্ত সেটাকে সহায়তা করবে। গণঅধিকার পরিষদের এ সিদ্ধান্ত মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ সময়ে সরকারবিরোধীদের দৃঢ় ঐক্য দরকার ছিল।

২০২২ সালের ৮ আগস্ট সাতটি দল ও সংগঠন নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এসব কর্মসূচি ও নেতৃত্বের বিরোধে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মনোমালিন্য নিয়ে আলোচনা হয়। জোটে ভাঙনের শঙ্কাও ছিল। গণ অধিকার পরিষদের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সে শঙ্কা সত্যি হলো।
ভিন্নবাত



আরো




মাসিক আর্কাইভ