1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :

শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে যা করবেন

ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১২:১১ pm

শিশুকে বই পড়ায় অভ্যস্ত করে তোলা গেলে এক ঢিলে অনেক পাখি মারা যায়। চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি বই মনের ভেতর তৈরি করে নতুন শব্দভাণ্ডার। একটি ভালো বই পড়ার সময় এর চরিত্র, পরিবেশ—সব কিছু মস্তিষ্ক একটা সিনেমার মতো চোখের সামনে উপস্থাপন করে। এতে বাড়ে কল্পনাশক্তি।
বইপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা টিভি কিংবা মোবাইলে আসক্ত হয় না।
করোনাকাল কত কিছুই না শিখিয়ে গেল আমাদের। কেউ কখনো ভেবেছিল, একটি ক্ষুদ্র ভাইরাসের আক্রমণে পুরো পৃথিবী থমকে থাকবে বছরের পর বছর। ঘরবন্দি হয়ে যাবে পৃথিবীর মানুষ। মানুষ যখন ঘরবন্দি তখন দেখা দেয় আরেক বিপদ।

মানসিক অবসাদ, নেতিবাচক চিন্তা, হতাশার মতো ঘুণপোকা ঘিরে ধরে মানুষকে। মানুষকে এর বিরুদ্ধে লড়তে মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যায়াম করা, শখের জিনিস চর্চা করা, প্রিয়জনদের সঙ্গে গল্প করার পাশাপাশি আরেকটি জিনিসের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়—বই পড়া। স্মার্টফোন, স্মার্টটিভি, ট্যাবের এই যুগে সামাজিক নানা মাধ্যমের কারণে বই পড়া ভুলতেই বসেছিল মানুষ। করোনাকালে সেই বই পড়ার প্রতিই নতুন করে তাগিদ দেন তাঁরা। আনন্দময় সময় কাটাতে বই পড়ার বিকল্প নেই। ভিনসেন্ট স্টারেটের ভাষায়, কেউ যখন বই সংগ্রহ করে, তখন সে আনন্দকেই সংগ্রহ করে। শিশুকে একুশে বইমেলায় নিয়ে যেতে পারেন। তার পছন্দের বই কিনে দিন। একবার পড়ার নেশা তৈরি হয়ে গেলে অন্য যেকোনো ক্ষতিকর নেশা থেকে দূরে থাকবে আপনার সন্তান।

বই পড়ার উপকার

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বই পাঠ আমাদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটায়। বই পড়া আমাদের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়, অধিক কর্মক্ষম থাকে। আমাদের স্মৃতিভ্রষ্টতা বা আলঝেইমারের মতো অসুখ থেকেও দূরে রাখে বই পাঠ। ’

যেকোনো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে বই পাঠ। বই পাঠের সময় একই সঙ্গে কাহিনি বা বিষয়টিকে কল্পনা করে নিতে হয়। এতে মানুষের কল্পনাশক্তি বাড়ে। কল্পনা করতে পারাটা জ্ঞান অর্জনের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। বই পাঠের মাধ্যমে শিশুরা ছোট থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে শেখে। এ ছাড়া অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে বন্ধন গড়ে দেয় বই। এখন আমাদের একাডেমিক পাঠসূচিও সৃজনশীল যুগে এসেছে। পরীক্ষায় মুখস্থের চেয়ে কল্পনাশক্তিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বই পড়লে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়, সৃজনশীল লেখায় কাজে দেয়। বই পড়া ছোট-বড় সবার মধ্যেই সহনশীলতা বাড়ায়। এতে অন্যের মতামত মেনে নেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে নিজস্ব মতবাদ তৈরি হয়।

কাগজের বই পড়তে দিন

ঢাকা শহর তো বটেই, ছোট ছোট মফস্বলের শিশুদের চোখও এখন ঢেকে যাচ্ছে ভারী চশমার কাচের আড়ালে। এর পেছনে দায়ী অতিরিক্ত স্মার্টফোন, টিভি ও ট্যাব আসক্তি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শামীমা ইয়াসমীন বলেন, ‘স্মার্টফোন, ট্যাব ও টিভি থেকে বিচ্ছুরিত নীল আলোকরশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় একনাগাড়ে এগুলোর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। স্মার্টফোনের নীল আলো রাতে ঘুমাতেও বিঘ্ন সৃষ্টি করে। অনেক সময় তা চোখের দৃষ্টিও কেড়ে নিচ্ছে। শিশুকে কাগজের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। কাগজের বই ধরে পড়া, পৃষ্ঠা উল্টে পড়ার যে আনন্দ তা স্মার্টবুক বা পিডিএফে পাওয়া যায় না। ’

স্মার্টবুকও পড়তে পারে

স্মার্টবুকের চেয়ে কাগজের বই বেশি উপকারী। তার মানে স্মার্টবুক পড়া যাবে না, তা নয় কিন্তু! বরং ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকে অযথা স্ক্রল করার চেয়ে স্মার্ট বই পড়া অনেক বেশি উপকারী। সন্তানের স্মার্টফোন ও ট্যাব আসক্তি কমাতে পিডিএফ বা স্মার্টবুক পড়তে দিতে পারেন। এখন অনেক ই-বুক অ্যাপ ও পিডিএফ বই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। এখান থেকে নামিয়ে দিতে পারেন। তবে অবশ্যই ই-বুক পড়ার জন্য সন্তানকে সময় বেঁধে দিন।

বই পড়ার অভ্যাস গড়তে

জনপ্রিয় লেখক, শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের পরামর্শ হচ্ছে, ‘মানুষ হওয়ার সহজ একটি পদ্ধতি আছে, সেটা হচ্ছে বই পড়া। ’ সন্তানকে বইমুখী করতে পারলে সে নিজ থেকেই সুন্দর জীবনের স্বপ্ন খুঁজে নেবে। এ জন্য তার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে দিতে হবে। বাকিটুকু সে নিজেই করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান দিলেন বই পড়ার অভ্যাস গড়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ—

১. সন্তানের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস করতে সবার আগে বই কেনা জরুরি। সন্তানের বয়স অনুসারে তার জন্য বই কিনে দিন।

২. শিশু গল্প শোনার বায়না করলে তাকে বই পড়ে শোনান। শুনতে শুনতে একসময় তার মধ্যে পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।

৩. সন্তান বই পড়া শিখলে তাকে পাঠের বাইরের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। কোথাও বেড়াতে গেলে নিজের জন্য বই নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের ব্যাগে তার পছন্দের কয়েকটি বই ঢুকিয়ে দিন।

৪. শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা বড়দের দেখে শেখে। এ জন্য আপনি নিজে বই পড়ুন। তার মধ্যেও পড়ার কৌতূহল তৈরি হবে।

৫. সন্তান যে বইটি পড়ছে তা নিয়ে তার সঙ্গে গল্প করুন। তার কাছে বিষয়বস্তু জানতে চান। সে আরো বই পড়ার উত্সাহ পাবে।

৬. বই কেনার সময় বা অর্থ না থাকলে পাড়া বা মহল্লার কোনো পাঠাগারে সন্তানসহ নিজে ভর্তি হন। ছুটির দিনে বা অবসরে সন্তানকে নিয়ে পাঠাগারে ঢুঁ মারুন। অন্যদের দেখেও পড়তে আগ্রহী হবে সে।

৭. বইয়ের রিভিউ লিখতে বলুন। সন্তান যে বইটি পড়ছে বা পড়ে শেষ করেছে সেটা নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ লিখতে বলুন। তাকে পুরস্কৃত করতে পারেন।

৮. সন্তানের বয়স কম হলে তাকে কম পৃষ্ঠার বড় বড় ছবিযুক্ত বই পড়তে দিন। কম সময়ে পড়ে শেষ করতে পারলে নিজেই আরেকটি বই পড়তে চাইবে। এবার আগেরটির চেয়ে কয়েক পৃষ্ঠা বেশি কোনো বই পড়তে দিন।

৯. বাসার বারান্দায়, চিলেকোঠায়, ছাদে বা সুবিধাজনক যেকোনো একটি স্থানে রিডিং কর্নার গড়ে তুলুন। বই নিয়ে আড্ডা দিন। দেখবেন বাড়ির ছোট সদস্যটিও এখানে বসে বই পড়তে শুরু করবে।

১০. বাড়িতে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা, কিশোর ম্যাগাজিন ও সাময়িকী রাখার চেষ্টা করুন। দেখতে দেখতেই একসময় পড়ার আগ্রহ তৈরি হবে সন্তানের মধ্যে।



আরো




মাসিক আর্কাইভ