রংপুরে নেক ব্লাস্ট নামের রোগ রোপন করা ইরি ক্ষেতে দেখা দিয়েয়ে।কৃষকের রোপন করা পাকা ধান ক্ষেত দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু পাকা ধানের শীষগুলো যে চিটা হয়েছে। এ অবস্থা দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। কাছ থেকে দেখলে ধান গাছ গুলোর শীষের এ অবস্থা স্পষ্ট হয়। মাঠের কাছে যেতেই দেখা যায়, নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানক্ষেতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন এক যুবক। চেহারায় হতাশার ছায়া। জিজ্ঞেস করে জানা গেল তার নাম রুহুল আমিন (৩৮)। বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দি কাবিলাপাড়া এলাকায়। নেক ব্লাস্ট রোগে তার পুরো ধান ক্ষেত চিটা হয়ে গেছে। তিনি ২৮ শতক জমিতে এক মণ ধানও মিলবে না বলে জানান।এই চিটা ধান কেটে গোখাদ্য ছাড়া কোন উপায় নেই ।শুধু রহুল আমিনই নন তার মতো অনেকের বোরো ধান ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট (ধানের শীষের গোড়া পচা) রোগ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কিছু ক্ষেতে অজানা রোগের সংক্রমণ হয়েছে বলে কৃষকরা বলছেন। তবে ওই ক্ষেতগুলো হিট শকের (গরম বাতাস) প্রভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে বলে অনেকে দাবি করেছেন।রংপুর জেলায় শতশত হেক্টর জমিতে নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ মাত্র সাত দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে আক্রমণের পরিমান নিরূপন করেছে। তবে কৃষি বিভাগ নানা পরামর্শ দিয়ে রোগপ্রতিরোধে বিতরণ করছে প্রচারপত্র (লিফলেট)।
রংপুর কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে রংপুরের ৮ উপজেলায় এক লাখ ৩০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ধানের ফলন ভালো হলেও হঠাৎ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
কয়েকজন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক জমির বোরো ধান সাদা হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করেও কোন লাভ হয়নি। শুধু রোগ নয়, কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে অনেক এলাকার ক্ষেত ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। মাটিতে হেলে পড়েছে ধান গাছ। রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে নেক ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে তাতে অনেকের জমির ফসল ইতিমধ্যে চিটা হয়ে গেছে। তবে কিছু কৃষক ওষুধ স্প্রে করেও আংশিক ফল পেলেও শতভাগ আবাদ ঘরে তুলতে পারবে না বলে কৃষকরা জানান।
পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের কৃষক মহব্বত মিয়া বলেন, ‘মানুষের জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করে বিপদে পড়েছি। জমির ধানের শিষ সাদা হয়ে যাচ্ছে।কাবিলাপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রায় প্রত্যকের জমিতে এই রোগ দেখা দিয়েছে। ওষুধ প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। এই রোগ ও শিলাবৃষ্টিতে এবার কৃষক ক্ষতি গ্রস্থ। ধান চিটে হয়ে যাওয়ায় কেটে গবাদিপশুকে খাওয়ানো ছাড়া কোন উপায় নেই।
জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দঃ কোলকোন্দ বাবুপাড়া গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া জানান, তার ৪০ শতক জমির ২৮ ব্রি ধান ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে। কীটনাশক স্প্রে করেও ফসল রক্ষা করতে পারেনি। পুরো ক্ষেত চিটা হয়ে গেছে। কৃষক জিতেন চন্দ্র রায় জানান, যে কৃষক ২৮ ব্রী ধান চাষ করেছেন, তাদের সবার ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অনেক কৃষক একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারবে না।
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। নেক ব্লাস্ট রোগে ধানের শীষের নিচে কালো দাগ দেখা দেয় ও শীষ দ্রæত মরে যায়।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান বলেন, আবহাওয়া প্রতিকূল না হওয়ায় নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত এক হেক্টর ক্ষেতে নেক ব্লাস্টের আক্রমণ নিরূপন করেছি। তবে এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে এক লাখ ৩০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জমিতে নেক ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত মাত্র সাত দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে আক্রমণের পরিমান নিরূপন করেছি।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন