ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হলেও সেখানে ক্ষুধা ও অপুষ্টি পরিস্থিতি এখনো “বিপর্যয়কর” বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সংস্থাটি বলেছে, ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে বলে খাদ্যসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো জানায়, অবরুদ্ধ গাজায় যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী ঢুকছে, তা জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণে একেবারেই অপ্রতুল। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, তাদের প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখনো সেই পরিমাণের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, কারণ ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডে যাওয়ার জন্য মাত্র দুটি প্রবেশপথ খোলা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, “পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ, কারণ যা ঢুকছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। যথেষ্ট খাদ্য না থাকায় ক্ষুধার পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।”
এর আগে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বুধবার জানানো হয়, ১১ হাজার ৫০০ গর্ভবতী নারীসহ গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ জনগণ অনাহারে ভুগছেন। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, চলমান এই ক্ষুধা সংকট গাজায় “পুরো এক প্রজন্মের ওপর” দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপ-নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন বলেন, এখন গাজায় জন্ম নেওয়া ৭০ শতাংশ শিশুই সময়ের আগেই বা কম ওজন নিয়ে জন্মাচ্ছে, যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে এই হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। তিনি বলেন, “অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়ের ওপর নয়, নবজাতকের ওপরও ভয়াবহ হবে।”
এর আগে চলতি বছরের আগস্টে গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি জানিয়েছিল, পুরো গাজা উপত্যকায় ৫ লাখের বেশি মানুষ “বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে” রয়েছেন।
মার্কিন মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম জোরদারের কথা ছিল। জাতিসংঘ প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণ প্রবেশের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৭৫০ টন খাদ্যই গাজায় প্রবেশ করছে, কারণ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা শুধু দুটি প্রবেশপথ খোলা রয়েছে।
ফিলিস্তিনি এনজিও পিএআরসি–এর বিদেশি সম্পর্কবিষয়ক পরিচালক বাহা জাকউত বলেন, “যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও গাজায় পরিস্থিতি ভয়াবহ”। তিনি জানান, বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট, কোমল পানীয় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বীজ, জলপাইয়ের মতো পুষ্টিকর জিনিসপত্র নিষিদ্ধ।
তিনি বলেন, “এগুলো শিশু, নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম পুষ্টিচাহিদাও পূরণ করতে পারে না”। কিছু ফল ও সবজি ঢুকলেও তার দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। এক কেজি টমেটোর দাম আগে যেখানে ছিল এক শেকেল, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৫ শেকেল (৪.৫০ ডলার)।
এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল নির্বিচারে গাজায় ত্রাণবাহী চালান আটকে দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত ও ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন।
Editor: Rumana Jaman Shachi
Raipura House (2nd Floor), 5/A, Outer Circular Road
West Malibag, Dhaka-1217
Communication
E-mail: vinnabarta@gmail.com
Phone:+8802222220051