যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা এখন বিশ্বজুড়ে সবথেকে আলোচিত ঘটনা। বিশ্ব মিডিয়ায় নানা দৃষ্টিকোণ থেকে এ ঘটনা প্রচারিত হচ্ছে। জার্মান গণমাধ্যম ডাই ওয়েল্ট ডেইলিতে এ ঘটনাকে ‘বিরক্তিকর, দুঃখজনক ও আতঙ্কজনক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অপরদিকে নাইজেরিয়ান ট্রিবিউন এই খবরের শিরোনাম করেছে, ‘মার্কিন গণতন্ত্রকে নোংরা করলো ট্রাম্প সমর্থকরা’। এছাড়া, অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোতেও বিদায়ি মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুমুল সমালোচনা করা হয়েছে। সেখানে ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
‘নার্সিসিজমেরই (আত্মমুগ্ধতা) জয় হচ্ছে’ এমন শিরোনাম করা হয়েছে ফ্রান্সের গণমাধ্যম লা ফিগারোর সম্পাদকীয়তে। ফ্রান্সের আরেক প্রথম সাড়ির গণমাধ্যম লা মন্ডেতে প্রকাশিত এক কলামে বলা হয়েছে, হাল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানানো ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সিস্টেমের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করে দিয়েছেন। একই গণমাধ্যমের আরেক শিরোনামে ট্রাম্পকে ‘বিদ্রোহী প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তুরস্কে সরকারপন্থী গণমাধ্যম তুর্কি পেপার তাদের সংবাদে লিখেছে, ট্রাম্পের জেদে উত্তেজিত যুক্তরাষ্ট্র। মিশরের এমবিসি মিজর টিভিতে এক গবেষক বলেন, আমি আশা করবো এই ঘটনার পর ট্রাম্পের বিচার হবে। যুক্তরাষ্ট্র এখনকার সত্যিকার অর্থে আর সুপারপাওয়ার নেই।
এদিকে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলো এমন সুযোগকে হাতছাড়া করতে চায়নি। একে দেশটির কাঠামোগত দুর্বলতা হিসেবে প্রচার করেছে দেশগুলোর গণমাধ্যম। হংকং দাঙ্গার সময় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাকে ‘সুন্দর দৃশ্য’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এ নিয়ে চায়না ডেইলি টুইটারে লিখেছে, ন্যান্সি পেলোসি যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনাকে এখন কীভাবে দেখছেন? গণমাধ্যমটি এই খবরের শিরোনামে লিখেছে, ক্যাপিটল হিল ধ্বংসযজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিও মিথ্যাভাবে প্রচার করেছে যে, ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র ‘মার্শাল ল’ জারি করেছে। যদিও তিনি আসলে ১২ ঘন্টার কারফিউ জারি করেছিলেন। রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। সমগ্র দিনব্যাপী এই সংবাদ প্রচারিত হয় টিভিগুলোতে। দেশটির টিভি চ্যানেল রোসিয়া ২৪ পুরোদমে উত্তেজনার চিত্র প্রচার করে। এতে ক্যাপশন জুড়ে দেয় ‘এটাক অন ক্যাপিটল’। অনেক রুশ চ্যানেলকে ট্রাম্প সমর্থকদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতেও দেখা যায়। বলা হয়, নভেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সামগ্রিক ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের গণতন্ত্রের দুরাবস্থা হিসেবে দাবি করা হয়। রোসিয়া ওয়ান টিভি চ্যানেল ক্যাপিটলে হামলার জন্য মার্কিন গণতন্ত্রকেই দায়ি করে।
পোল্যান্ডের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডেইলি জেজপোসপোলিটা। রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত হলেও গণমাধ্যমটি লিখেছে, এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে লুকিয়ে থাকা হতাশার এক প্রদর্শন যা গত কয়েক দশক ধরে জন্ম নিয়েছে। সেখানে কৃত্রিম হাসি ও ‘দুনিয়ার সেরা রাষ্ট্র’ তকমার পেছনে আয় বৈষম্যতার দুঃখ লুকিয়ে আছে। সমাজের বড় একটি অংশ যখন বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে তখন সে রাষ্ট্রেই কিছু ধনী জানেন না তারা কত বিলিয়ন ডলারের মালিক।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এসএস