রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির নামে রমরমা ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। প্রতারকচক্র পানি সংকট ও দূষণকে পুঁজি করে নগরবাসীকে নানা ভাবে ঠকাচ্ছে। বিষয়টি ভয়াবহ আকার ধারন করলেও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটা নিরব। পানি বানিজ্যিক পন্য নয়, প্রাণ ও প্রকৃতির অপরিহার্য উপাদান হিসাবে চিহ্নিত হলেও বর্তমানে পানি নিয়ে চলছে ভয়নক বানিজ্য। তবে মাঝেমধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করলেও এ বাণিজ্য বন্ধ করতে পারছে না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি উত্তোলন, উন্নয়ন ও সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা নানা অপকৌশলে মানুষকে দূর্গন্ধ ও দূষিত পানি পানে বাধ্য করছে। অন্যদিকে এ পানি পান করে সাধারণ মানুষের নানাবিধ পেটের পীড়া রোগযন্ত্রনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই সাধারণ মানুষ পানি বানিজ্যিক গোষ্ঠীর খপ্পড়ে পড়ছে। এ সুযোগে একটি অসাধু ব্যবসায়ীচক্র ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া ছাড়াই সরাসরি জার ও বোতলজাতকরণ করে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ষ্ট্যান্ডার্ডসএনাড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) কর্তৃপক্ষ ও মোবাইল কোর্ট এ ধরনের পানির ব্যবসার সঙ্গে জরিতদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু এতেও কর্ণপাত করছে না তারা।
এবিষয়ে বিএসটিআইয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে দুর্গন্ধ ও পানি সংকটকে পুঁজি করে সারাদেশে পাঁচ শতাধিক পানি কোম্পনি গড়ে উঠেছে। এদের অনেকেরই বিএসটিআইয়ের সনদ নেই। ওয়াসার আওতাভূক্ত বেশিরভাগ এলাকাতে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা যেমন দূর্গন্ধযুক্ত তেমনি ময়লা। সেই সাথে রয়েছে পানির তীব্র সংকট। এই সুযোগে চলছে নিম্নমানের পানির রমরমা বানিজ্য। এতে সাধারন মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ঠকছে, তেমনি নকল ও ভেজাল পানি পান করে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তারা। অন্যদিকে লাভবান হচ্ছেন প্রতারকচক্র।
বর্তমানে কোনো কোনো এলাকায় সারাদিনে এক বালতি বিশুদ্ধ পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। অভিজাত এলাকা গুলশান, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বনানিতেও সংকট ছড়িয়ে পরেছে। পুরানো ঢাকার অবস্থা আরো ভয়াবহ। এ ব্যাপারে মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: রাশেদুল কাদের জানান, এসব অপরাধের জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক পানি কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন বাতিল ও সীলগালা করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে বহু কোম্পানিকে। তার পরও থেমে নেই এসব অপকর্ম। তিনি এসব কৃতকর্ম জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলেও মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে নগরব বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবিব বলেন, পানির মূল উৎস নষ্ট হওয়ার কারণে পানি সংকট দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, মুনাফা লোভী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে পানিকে বানিজ্যিকি করণের লক্ষ্যে লাইসন্সের মাধ্যমে আমাদের নদ-নদী, প্রাকৃতিক পানির উৎসস্থল ইজারা দেওয়া হচ্ছে। পানি সংকট মোকাবিলার জন্য পানির বিতরণ পদ্ধতি রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে রাখার আহবান জানান তিনি। তানা হলে প্রাণ ও প্রকৃতির অপরিহার্য উপাদান পানি চলে যাবে মাফিয়াচক্রের কবলে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, আমাদের পানিতে এখন দুর্গন্ধ ও ময়লা নেই। নগরবাসী চাইলে তা ফুটিয়ে নিশ্চিন্তে খেতে পারে। তিনি বলেন, বাসা বাড়ির পানির ট্যাংক পরিস্কার না করায় পোকা মাকড়ের সৃষ্টি হতে পারে। এ ব্যাপারে মালিকদেরকেও সচেতন হতে হবে।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই