উর্দুভাষী অধ্যুষিত সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচন আসছে ২৮ ফেব্রুয়ারী। ভোটের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উত্তাপ ততই বাড়ছে। ভোটের হিসাব মিলাতে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠছে। ছোট খাট আড্ডা থেকে ঘরের বধুরাও প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে অংক মেলাতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে সৈয়দপুর পৌর নির্বাচন। বড় তিনটি দলই প্রার্থী দিয়েছেন। রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। সব মিলিয়ে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী ২০২১ সালের পঞ্চম দফার পৌর নির্বাচনে সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিয়েছেন। নৌকা মার্কার প্রার্থী হয়েছেন রাফিকা আখতার জাহান বেবি, ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব রশিদুল হক সরকার ও লাঙ্গল মার্কা নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন জাতীয় পার্টির আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। হাতপাখা মার্কার প্রার্থীর নাম হাফেজ নুরুল হুদা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল আউয়াল রবির মার্কা মোবাইল ফোন। রাফিকা আখতার জাহান প্রয়াত স্বামী জননেতা আখতার হোসেন বাদলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করছেন। কোনদিনও রাজনীতির মাঠে ছিলেন না এই প্রার্থী। স্বামীর মৃত্যুর পর জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যেও নেই কোন তাঁর তেমন সখ্যতা। আ’লীগের কর্মী সমর্থকরাই তাঁর মূল ভোট। সবচেয়ে তার বড় ভরসা শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা। স্থানীয় রাজনীতিতে তার কতটুকুই প্রভাব পড়বে তা অংকে হিসাব করা কঠিন। তবে প্রয়াত বাদল ছিল স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ ও সৎ চরিত্রের লোক। এটাই কাজে লাগিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাদলের স্ত্রী বেবী। সদ্য প্রয়াত মেয়র আমজাদ হোসেন সরকারের ছোট ভাই আলহাজ্ব রশিদুল হক সরকার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। বড় ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি মেয়র পদে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। মরহুম বড় ভাইয়ের ব্যক্তি জনপ্রিয়তাকে ভোটের মাঠে কৌশল হিসাবে ব্যবহার করছেন। অত্যন্ত সাদামাঠা সহজ ও সরল মনের প্রার্থী তিনি। রাজনীতির কুট চাল রপ্তের বাইরে তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক চরিত্র। সাধারণ মানুষের কাছে সহজে আপন হওয়ার মতন আবহ রয়েছে তাঁর অবয়বে। লাঙ্গল মার্কার জাপা প্রার্থী আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক সৈয়দপুরের আদি বনেদি পরিবারের সন্তান। উত্তরাঞ্চলে কর্ম সৃষ্টির কারিগর বলা হয় তাকে। তাঁর পরিচালিত ইকু গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় হাজার হাজার বেকার সুযোগ পেয়েছে কাজের। শিল্প মালিক হলেও শ্রমিক বান্ধব চরিত্রের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ তাকে আপন মানুষ হিসাবে ভাবে। গত অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ভ্যাট দাতার পুরস্কার পেয়ে তিনি রাজস্ব বিভাগের পক্ষ থেকে স্মানিত হয়েছেন। অল্প আয়ের মানুষরা কর্ম বান্ধব মানুষ হিসাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধার নজরে দেখে তাঁকে। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে উত্তরাঞ্চল জুড়ে রয়েছে তাঁর খ্যাতি। কোন ধরণের আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে এই প্রার্থীসহ তাঁর পরিবারের কোন সদস্যের সমাজে নেই কোন বদনাম। ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য হিসাবে লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক অত্যন্ত সরল মনের মানুষ। সৈয়দপুর পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। রংপুর বিভাগের মধ্যে বৃহৎ এই পৌরসভার ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯৪ হাজার। এর মধ্যে আ’লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি মিলে দলীয় ভোটের সংখ্যা ৪০ হাজারের মত। তবে দলগত ভাবে পৌর এলাকায় ভোট সংখ্যার দিক থেকে বিএনপি প্রথম, আ’লীগ দ্বিতীয় ও তৃতীয় হলো জাতীয় পার্টি। ভাসমান ৫৪ হাজার ভোটারের মধ্যে অর্ধেক ভোটার উর্দুভাষীরা। এদের আধা ভোটার আটকে পড়া পাকিস্তানী ক্যাম্পে বসবাস করে। জন্মগত ভাবেই উর্দুভাষী ভোটারা সরকার সমর্থক হলেও প্রচন্ডভাবে নৌকা বিরোধী। ভোটের রাজনীতিতে সবসময় তারা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে মুল প্রীতিটা তাদের ধানের শীষ মার্কার প্রতি। আবার এক্ষেত্রেও ব্যত্যয় আছে আর তা হলো তাদের পক্ষে কে জোরালোভাবে অবস্থান নিয়ে পাশে থাকতে পারে এমন ব্যক্তিকেই তারা নেতা হিসাবে পছন্দের তালিকায় স্থান দেয়। পৌর এলাকায় ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটগতভাবে আ’লীগের অবস্থান দ্বিতীয় হলেও কিছু নেতা গোপনে বিক্রি হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করায় পরাজয় মানতে হয় । তার পরও আ’লীগ নেতাকর্মীদের সাফ জবাব জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী করেছেন সেই প্রার্থীকে যে কোন মূল্যেই নির্বাচিত করতে হবে। এদিকে ভোটারদের বিশ্লেষণে জানা গেছে বিশেষ করে উর্দুভাষী ভোটাররা ঐতিহ্যগতভাবে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিলেও তারা নৌকায় ভোট দিবেন না। পরিবর্তে তারা লাঙ্গল ও ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিতে পারেন। এতে করে তাদের উভয় কূল রক্ষা পাবে। যেহেতু জাতীয় পার্টিও সরকারে আছে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনও হয় মহাজোটগত ভাবে। এমন অবস্থা বিশ্লেষণে বিশিষ্টজনদের মন্তব্যে আভাস মিলেছে চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধ লাঙ্গল, নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হবে। ভোটে ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল হলে ভোটের ফলাফল উল্টো হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাফিকা আক্তার জাহান বেবি জয়ের মালা গলায় পড়তে পারেন।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন