ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার ঘটনা তদন্তে দোষী সাবস্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গণপূর্ত অধিদফতরের ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু’র শাস্তির সুপারিশ করে। প্রদীপ কুমার বসু’র বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ ও লুটপাটের আরো যতো ছিল তার অধিকাংশই প্রমাণিত হয়, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এদিকে, গত ৩০ মে ২০২২ তারিখে প্রদীপ কুমার বসু’র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। প্রদীপ কুমার বসু’র তার আপন ভাই (সহোদর) প্রশান্ত কুমার বোস এর পক্ষে নোটিশটি পাঠান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মো: কামরুল আলম (কামাল)।
ওই নোটিশে বলা হয়, মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রদীপ কুমার বসু বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ উপায়ে মোটা অংকের সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তাকে লঘু দণ্ড ও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রদীপ কুমার অত্যন্ত কৌশলে ওই অভিযোগ ও দণ্ডের তথ্য গোপন রেখে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে পদোন্নতি ভাগিয়ে নেন। সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর বিধি ৪ এর ২(বি) উপ-বিধি অনুযায়ী লঘু দণ্ড প্রদান করা হয়। এরপর দণ্ডের তথ্য গোপন রেখে কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য বুঝিয়ে পদোন্নতি নেন তিনি। প্রদীপ কুমার বসু গোপালগঞ্জের উপ-বিভাগী প্রকৌশলী থাকাকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবজ্ঞা করা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের মাজারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের কারণে সেই সময়ও তাকে লঘু দণ্ড হিসেবে সতর্ক হয়। কিন্তু তিনি সতর্ক হননি, বন্ধ করেননি দুর্নীতিও। দুর্নীতি করে হাতিয়ে নেওয়া কোটি কোটি টাকা দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলেন তিনি। আর সেকারণেই দুর্নীতি ও লুটপাট করেও কোনো দণ্ড ও দণ্ডের সুপারিশকে আমলে নেন না প্রদীপ কুমার বসু।
এরআগে গত জুনে প্রদীপ কুমার দম্পতির সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক। গণপূর্তের ঢাকা মেট্রোপলিটনের জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু ও তার স্ত্রীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রদীপের স্ত্রী তাপসী দাস নিজেও একজন প্রকৌশলী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্তের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতি করে প্রদীপ কুমার বসু অনেক আগে থেকেই আলোচনায়। তিনি বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। জি কে শামীম, গোল্ডেন মনিরসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের কারণে দুদক তাকে এর আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। ওই কর্মকর্তারা জানান, গোপালগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগে থাকা অবস্থায় প্রদীপ কুমার বসুর নাম জড়িয়ে যায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে। এ বিষয়ে ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এক বছরের জন্য তিনি সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। খুলনা গণপূর্ত জোনে দায়িত্ব পালনকালেও প্রদীপ কুমার নানা বিতর্কের জন্ম দেন। তিনি শত কোটি টাকার মালিক বলে ঘনিষ্ঠ মহলে প্রচার রয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানি চক্রের হোতা গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে তার সখ্যের কথা সহকর্মীরা জানেন।
মনিরের সঙ্গে একটি ছবি গত বছর ফেসবুকে ভাইরাল হলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন প্রদীপ। র্যাব মনিরকে গ্রেপ্তার করলে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে গণপূর্তের নানা অপকর্ম। ঢাকা গণপূর্ত মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব পালন অবস্থায় প্রদীপ কুমার বসু’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এজন্য তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ এর উপ-বিধি (খ) অনুযায়ী বিভাগী মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তিনি এই মামলা দায়ের বাধাগ্রস্ত করতে অত্যন্ত সু-কৌশলে দুর্নীতির আশ্রয় নেন।
সম্প্রতি (৩০ গত মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো ৬পৃষ্ঠার লিগ্যাল নোটিশের কপি ভিন্নবার্তা ডটকম এর হাতে রয়েছে। ওই এতে প্রদীপ কুমারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কিছু খণ্ড চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ১ জুন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-১) মো: মমতাজ উদ্দিন এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একই প্রসঙ্গে কথা বলতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার এর ফোন নম্বরে কল দেওয়া হয়, তিনি ফোন রিসিভ না করায় প্রদীপের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন