প্রায় নয় বছর আগে রাজধানীর মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল সম্প্রসারনের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এসব টার্মিনালে বাস রাখার জায়গা না পাওয়ায় অনেকে দীর্ঘসময় ধরে সড়কে বাস পার্কিং করে রাখছে। এতে তীব্র যানজটের কবলে পড়ছে নগরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরবাসীর ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ২০১২ সালে রাজধানীর মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল সম্প্রসারনের উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। এ বিষযে ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়াসহ নানা জটিলতায় মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল সম্প্রসারন করতে পারেনি।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনাল দুটির জায়গা বাড়াতে গাবতলী বাস টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) প্রায় ২০ বিঘা পরিত্যক্ত ও পতিত জমি রয়েছ। এ জমি কজে লাগিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনাল সম্প্রসারন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ডিএনসিসি জানায়, বর্তমানে ২১ দশমিক ৮৬ একর জমির ওপর বাস টার্মিনালটি রয়েছে। যাত্রী পরিবহন ও যানজট নিরসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ওই এলাকায় টার্মিনালটি স¤প্রসারণ করা খুবই জরুরী। অপরদিকে, মহাখালী বাস টার্মিনালের পশ্চিম পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৫ বিঘা জমি পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে।
পূর্ব পাশে ঢাকা ওয়াসার ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১ একর জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। ওসব জমি কাজে লাগিয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল সম্প্রসারনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এক্ষেত্রে ওই জমিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতীকী মূল্য নির্ধারণ করে ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র মতে, ৩২ বছর আগে রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ বছরে রাজধানীতে জনসংখ্যা তিনগুণ বাড়লেও স্থাপিত হয়নি নতুন কোন বাস টার্মিনাল। এমনকি টার্মিনালের জায়গা বাড়ানোর উদ্যোগও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি টার্র্মিনালে গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতা আরো আগেই ছেড়ে গেছে। আর জায়গা স্বল্পতার কারনে এর প্রভাব পড়েছে রাস্তার ওপর। এক্ষেত্রে বাসগুলো টার্মিনালে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় রাখায় নিত্য যানজট লেগেই থাকে। এসব দিক বিবেচনা করেই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এ দুটি টার্মিনালের জায়গা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ৩২ বছর আগে নির্মিতব্য গাবতলী বাস টার্মিনালটি মাত্র সাড়ে ৩’শ বাস রাখা যাবে এমন ধারন ক্ষমতাসম্পন্ন করে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখান খেকে বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২০টি জেলার তিন হাজার বাস যাতায়াত করছে। এসব বাসগুলোকে টার্মিনালে জায়গা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে বাসগুলোকে সড়কে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থকতে হচ্ছে। অপরদিকে, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ বর্তমানে ১৬ জেলায় বাস চলাচল করছে। এই টার্মিনালটিকেও সাড়ে ৩শ’ বাসের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন করে তৈরি করা হয়। বর্তমানে টার্মিনাল দুটিতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে পাঁচ থেকে সাতগুণ বেশি বাস চলাচল করায় টার্মিনাল ছাড়িয়ে বাসগুলো আশপাশের সড়কের ওপর রাখা হচ্ছে। ফলে সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটসহ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নাগরবাসীর ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে গাবতলী ও মহাখালি বাস টার্মিনালটি সম্প্রসারনের জন্য ওই জমি ছাড়া, আরো ৫০ একর জমি প্রয়োজন। এ জায়গা যদি সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে বাসের সংখ্যা বাড়লেও কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না।
এদিকে, সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রী গাবতলী ও মহাখালি বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করে বাসস্ট্যান্ড দুটির সম্প্রসারন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সে হারে বাস বৃদ্ধি পেয়েছে সে তুলনায় বাস টার্মিনাল দুটি, অনেক ছোট। এতে বাসগুলো যাতায়াতে নগরবাসীকে অনেক দূর্ভোগে ফেলছে। কাজেই এ দূর্ভোগ থেকে বাচতে হলে টার্মিনাল দু’টির জায়গা সম্প্রসারনের বিকল্প নেই। এ বিষয়ে ডিএনসিসির বাস টার্মিনাল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ ৩২ বছরে এ টার্মিনাল দুটির জায়গা সম্প্রসারন না করায় বাসগুলোকে নিয়ে অনেক সমস্যয় পড়তে হচ্ছ। ফলে তা সম্প্রসারনের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় আমরা এখন পর্যন্ত সম্প্রসারণ কাজ শেষ করতে পারিনি। আশাকরি শিগগিরই সব জটিলতা কাটিয়ে মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল সম্প্রসারনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই