প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ তথা জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেশে আরও ১৬ জন মারা গেছে। ১৪ জেলায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি ও রাজস্থলীতে দুই যুবক, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, কুমিল্লার হোমনায় শিশু, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নৈশপ্রহরী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে স্কুলছাত্রী, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৮ মাসের শিশু, রংপুরের পীরগঞ্জে কৃষক মারা যান। এছাড়া নওগাঁয় ঢাকা ফেরত ব্যক্তি, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এক ব্যক্তি, বরগুনার বেতাগীর বৃদ্ধ ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নারী, খুলনায় আইসোলেশনে থাকা এক যুবক ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এসব ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিকটবর্তী নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে লকডাউন করা হয়েছে এসব ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের বাড়ি। কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে পরিবারের সদস্য ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম
শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা ও জ্বর নিয়ে বুধবার বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন এক যুবক। তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমেদ খান জানান, অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রামে (আন্দরকিল্লা হাসপাতাল) পাঠানো হয়। শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান।
রাজস্থলীর বাঙালহালিয়ায় হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার ভোরে মারা যান আরেক যুবক। তিনি চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের চাকরি করতেন। ১২ দিন আগে বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবারও বন্ধুদের সঙ্গে খেলেছিলেন। রাতে জ্বর আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রুইহ্লা অং মারমা জানান, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আশপাশের ১৭ দোকান ও বসতঘর বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
হোমনা (কুমিল্লা)
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মায়রামপুর গ্রামের শিশুটি কুমিল্লার হোমনায় বিজয়নগর গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে। এক সপ্তাহ ধরে ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুছ ছালাম সিকদার জানান, অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পথেই শিশুটি মারা যায়।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান চৌধুরী জানান, আইসোলেশনে থাকা এক বৃদ্ধ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় মারা গেছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায়। তিনি নৈশপ্রহরী ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ৪০ বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন।
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
দক্ষিণ পানান গ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া ৭ বছরের শিশুটি কয়েক দিন ধরে জ্বর ও পেট ব্যথায় ভুগছিল। শুক্রবার সকালে অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা না পাওয়ায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে দুপুরে শিশুটির মৃত্যু হয়।
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
আঠাবাড়ি ইউনিয়নের গলঘন্ডা গ্রামের ৮ম শ্রেণির ওই ছাত্রী কয়েক দিন ধরে সর্দিজ্বরে ভুগছিল। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান জানান, মেয়েটি স্তনের সমস্যায় ভুগছিল।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)
ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবত্তর পগলার দরগা গ্রামের ৮ মাসের কন্যাশিশুটি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নানার বাড়িতে মারা যায়। রাজারহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ড. মাশরুহুল হক জানান, শিশুটি কিছুদিন ধরে সর্দিজ্বরে ভুগছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসনালিতে খাবার আটকে যাওয়ায় শ্বাসবন্ধ হয়ে সে মারা গেছে।
পীরগঞ্জ (রংপুর)
বড় আলমপুর ইউনিয়নের খষ্ট্রি গ্রামে নিজবাড়িতে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে শুক্রবার ভোরে এক কৃষক মারা যান। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি কৃষিকাজ করতেন, কখনও বাড়ির বাইরে যাননি।
নওগাঁ
সিভিল সার্জন ডা. আখতারুজ্জামান আলাল বলেন, ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ১৫ এপ্রিল তিনি নওগাঁয় আসেন। এরপর থেকেই জ্বর-সর্দিতে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়, শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান।
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ)
পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের কলাদিয়া গ্রামের ওই ব্যক্তি (৫২) কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দিকাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. হাসিবুছ সাত্তার বলেন, কোনো হাসপাতালে যোগাযোগ না করে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান তিনি।
বগুড়া
বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল আইসোলেশন ইউনিটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভর্তি হওয়া রিকশাচালক যুবক রাত ৯টার দিকে মারা যান। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ওই যুবক বগুড়া শহরের সাবগ্রাম চাঁন্দুপাড়ার বাসিন্দা।
খুলনা
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে শুক্রবার সকালে এক যুবক ও দুপুরে ১০ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। ফ্লু কর্নারের ফোকাল পারসন ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, নগরীর লবণচরা এলাকার ওই যুবক শ্বাসকষ্ট নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এক ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। তিনি অ্যাজমার রোগী ছিলেন। তিনি আরও জানান, রূপসা উপজেলার কাজদিয়া গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার রাতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুটি ভর্তি হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তার মৃত্যু হয়।
বরিশাল
শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, করোনা ইউনিটে শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বরগুনার বেতাগী উপজেলার ফুলতলা এলাকার এই বাসিন্দা শ্বাসকষ্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এখানে ভর্তি হন। এদিকে এখানে শুক্রবার ভোরে ৪০ বছর বয়সী এক নারী মারা যান। তার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২০ রোগী আছেন; যাদের মধ্যে সাতজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই