1. admin-1@vinnabarta.com : admin : admin
  2. admin-2@vinnabarta.com : Rumana Jaman : Rumana Jaman
  3. admin-3@vinnabarta.com : Saidul Islam : Saidul Islam
  4. bddesignhost@gmail.com : admin : jashim sarkar
  5. newspost2@vinnabarta.com : ebrahim-News :
  6. vinnabarta@gmail.com : admin_naim :
  7. admin_pial@vinnabarta.com : admin_pial :

হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত দিনমজুররা

সাইদুল ইসলাম
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ৩:৫৬ pm

হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরেও রাজধানীসহ সরাদেশের দিনমজুররা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। বিশেষ করে রাজধানীতে যেসব দিনমজুর রয়েছে তারাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, এসব দিন মজুরিদের জন্য কঠামো অনুযাীয় সরকারের নিধার্রিত মজুরি আইন থাকলেও তা মনছে না কেউ। সরকরি নির্ধারিত যে মজুরী রাখা হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম মজুরি পাচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে কখনো অর্ধেক কখনো অর্ধেকের একটু বেশি মজুরি পাচ্ছে তারা। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও তাতে কাজ হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকরি নির্ধারিত শহরে একজন রাজমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি ৯৪০ টাকা। আর গ্রামাঞ্চলে ৮৭০ টাকা। টাইলস বা মোজাইকমিস্ত্রির মজুরি শহরে ১ হাজার ১০৫ টাকা ও গ্রামে ১ হাজার ২০ টাকা। আর সাধারণ শ্রমিক বা জোগালির মজুরি শহরাঞ্চলে হবে ৬৮০ টাকা। আর গ্রামে ৬২০ টাকা। নির্মাণ ও কাঠশিল্পের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ন্যূনতম মজুরির প্রজ্ঞাপনে শ্রমিকদের মজুরির এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে। কাঠশিল্পের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৮০ টাকা। শহরাঞ্চলের জন্য এটি প্রযোজ্য হলেও গ্রামে মজুরি হবে ৬২০ টাকা। নির্মাণ ও কাঠশিল্পের নতুন মজুরিকাঠামোতে ছয়টি গ্রেড রয়েছে। সব গ্রেডেই শহরাঞ্চলে বাড়িভাড়া মূল মজুরির ৪০ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ৩০ শতাংশ। তাছাড়া শহরাঞ্চলে চিকিৎসা ভাতা ৮০০ টাকা ও যাতায়াত ভাতা ৪০০ টাকা। গ্রামাঞ্চলে সেটি কিছুটা কম, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা যথাক্রমে ৬০০ ও ৩০০ টাকা। যদিও সব গ্রেডেই মূল মজুরি শহর ও গ্রামে একই।

এছাড়া, সাধারণ শ্রমিক বা জোগালির মাসিক মজুরি শহরাঞ্চলে ১৭ হাজার ৭২০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ১১ হাজার ৮০০ টাকা। বাড়িভাড়া মূল মজুরির ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ হাজার ৭২০ টাকা। তার বাইরে চিকিৎসা ভাতা ৮০০ ও যাতায়াত ভাতা ৪০০ টাকা। গ্রামাঞ্চলে এই শ্রমিকদের মাসিক মজুরি হবে ১৬ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে মূল মজুরি ঠিক থাকলেও বাড়িভাড়া ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৫৪০ টাকা। আর চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা যথাক্রমে ৬০০ ও ৩০০ টাকা।

তাছাড়া, সহকারী রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিকমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি বা পলিশমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি শহরাঞ্চলে হবে ৭৭০ টাকা। আর মাসিক মজুরি ২০ হাজার ১০০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি সাড়ে ১৩ হাজার। গ্রামাঞ্চলে এই গ্রেডের শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ১৮ হাজার ৪৫০ টাকা। দৈনিক মজুরি ৭১০ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত কোন মজুরিই পাচ্ছে না কোন শ্রমিকরা। রাজধানীর রামপুরায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে এক মাস কাজ করেছিল সেলিমউদ্দিন নামে এক দিনমজুর। তাকে ১৫ দিনের মজুরি দেয়া হয়েছে সরকার নির্ধারিত মজুরির চেয়ে অনেক কম। তাও সেখান থেকে একটা অংশ কেটে রাখা হয়েছে। পরে এক মাস কাজ করার পর সে চলে যেতে চাইলে তাকে বাকি দিনের মজুরি দেয়া হয়নি। সে জোড় করলে তাকে নানা ভাবে নির্যাতন করে মজুরি না দিয়েই তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু সেলিম নয় এভাবে সারাদেশের দিনমজুরিরা ঠিকাদারিদের কছে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মালিবাগে একটি নির্মাণাধীন ভবনে সহকারি দিনমজুর হিসেবে কাজ করছে রংপুরের নাছির হোসেন। তিনি জানান, যুগালী দিনমজুরের দৈনিক মজুরী ৬৮০ টাকা। এর মধ্যে একটা অংশ নিয়ন্ত্রণকারী ঠিকাদাররা কেটে রাখে। এতে কেউ বাধা দিলে তাদের সব মজুরি রেখে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে ইটভাঙ্গার কাজ করা দিনমজুর মনির হোসেন জানান, সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবার কখনো সারা রাত জেগেও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করি তাও আমরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছি না। কাজ করে যা পাই তার একাংশ নিয়ে যায় ঠিকাদাররা। পরে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয় না।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজধানীর দিনমজুরদেরই ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। দেশের জেলা উপজেলার দিনমজুরদেরও এ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্ধারিত মজুরি আইন কেউ মানছে না। ফলে দিনমজুরদের সংসার চালাতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে মহা বিপাকে। ভোলার এক দিনমজুর জানান, সে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করেও ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ৬২০ টাকা টাকার স্থলে তাকে দেয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা দিয়ে তার সংসার চালানো সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর আইন করে তাদের ন্যয্য মজুরি পাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান এসব দিনমজুরিরা। তাহলে হয়তো অনেকটা স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারবে তারা ।

এদিকে, রাজধানীর শ্রমবাজারগুলোতে দিনমজুরিদের ভিড় এখন লক্ষনীয়। দেখা গেছে. রাজধানীর রামপুরা বাজার, রামপুরা ব্রীজ, মালিবাগ, খিলগাঁও, বাড্ডা, ও গুলশান নতুন বাজারসহ প্রায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ভোর থেকে দিনমজুরিদের হাট বসছে। এ হাটকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণকারী ঠিকাদার সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের অসাধু ব্যক্তি কাজ দেওয়ার মাধ্যমে কারসাজি করে ন্যায্য মজুরি থেকে তাদের বঞ্চিত করছে। এসব দিনমজুরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তদেরকে ন্যায্য মজুরি দেয়ার কথা বলে কাজে নিয়ে তা দেয়া হচ্ছে না। তারা কাজ করে যে মজুরি পাচ্ছে তার একাংশ এ সিন্ডিকেট কেটে রাখে। দিতে না চাইলে নানা ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে অভিযোগ করেও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ।

অন্যদিকে, ঢাকাসহ জেলা উপজেলায় দিনমজুরিদের জন্য কলোনী স্থাপন, কেউ দুর্ঘটনায় নিহত হলে দশ লাখ ও আহত হলে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ, সুলভমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, দিনমজুরদের উপর নির্যাতন বন্ধ ও সমপরিমাণ মজুরি নিশ্চিত করাসহ ১২ টি দাবি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে তারা। কিন্তু তাদের এ আন্দোলনে সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করছে না। এবিষয়ে, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) সাবেক সভাপতি মুকুল শিকদার বলেন, নগরীতে দিন মজুরিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ সুযোগে এক শ্রেনির অসাধু ব্যক্তি বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তাদের কজে নিয়ে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করছে। এ বিষয়ে সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদেও ন্যায্য মজুরি পাওয়ার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।



আরো




মাসিক আর্কাইভ