সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেছেন সাংবাদিক নেতারা। এসময় তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও রোজিনার মুক্তির দাবি জানান।
এর আগে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব সংবাদ বর্জন করেন সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। এছাড়া প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
সোমবার (১৭ মে) দিনভর নাটকীয়তা। বিকেল থেকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য সচিবের দফতরে আটকে রাখা হয় প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশে যাওয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলার।
সিনিয়র সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তাতে সায় দেননি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার সকালে এ নিয়ে সাফাই দিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মন্ত্রণালয়। তবে তাতে আসেননি মন্ত্রী কিংবা সচিব। পাঠানো হয় অতিরিক্ত সচিব পদের একজনকে।
তবে রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে শুরুতেই এ কর্মসূচি বর্জনের ঘোষনা দেন সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের নেতারা। সংহতি জানান হেলথ রিপোর্টাস ফোরামও।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, বার বার আমরা সচিবের সঙ্গে কথা বলতে ও জানতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। তিনি কিন্তু কোনো উত্তর দেননি এমনকি দেখাও করেননি। আজকের এ সংবাদ সম্মেলন আমরা বয়কট করছি।
বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস বলেন, রোজিনা ইসলামের জামিন না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে সমস্ত পজেটিভ নিউজ বর্জন করবো।
জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতারাসহ রোজিনা ইসলামের ভাই দেখা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তারা রোজিনার জামিন নিশ্চিতের দাবি জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল) স্পষ্টভাবে জানিয়েছি তাকে তল্লাশির নামে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। এটার বিচার করতে হবে।
রোজিনা ইসলামের ভাই সেলিম রেজা বলেন, আপনারা দোয়া করবেন আমার বোনটা যেন সুস্থ থাকে, আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে।
একই সময়ে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা ও জেল হাজতে প্রেরণের প্রতিবাদে মিছিল বের করে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।
এর আগে দুপুরে অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মে) তার জামিন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ জসিম এ নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, সচিবালয়ে অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর শাহবাগ থানা পুলিশে সোপর্দ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৭ মে) রাত সাড়ে ৮টার পরে শাহবাগ থানা পুলিশের একটি টিম সচিবালয় থেকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিয়ে যায়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিব্বির আহমেদ ওসমানী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন