ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত প্রয়াত সাবিহউদ্দিন আহমেদকে ‘সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন তার নিকটসহকর্মীসহ নানা পেশার নাগরিকরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অফুরন্ত প্রাণশক্তি ছিলো তার। মনে হয়েছে টগবক করছে সবসময় জীবনী শক্তি নিয়ে। কোনো কিছুতে ভেঙে পড়ার লোক ছিলো; লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত। দেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
শনিবার বিকালে কুটনীতিক সাবিহউদ্দিন আহমেদের স্মরণ সভায় তার বর্ণাঢ্য জীবন-কর্ম তুলে ধরে তাকে স্মরণ করা হয় এবং জানানো তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। অর্থ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাবিহ উদ্দিন ছিলেন রিয়াল ন্যাশনালিস্ট। দেশ ও জনগনের প্রশ্নের কোনো কম্প্রমাইজ নেই। আন কম্প্রমাইজিং ছিলেন। এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। আমরা হারিয়েছি, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম সবুজ…। সাবিহ অনন্য। আমরা তার পরিবারের জন্য দোয়া করি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাবিহসহ আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলাম আমাদের একটা লক্ষ্য ছিলো এই সমাজটাকে পরিবর্তন করব, আমরা বদলে দেবো। সেটা সেই সময় সম্ভব হয়নি; সাবিহ চলে গেছেন সরকারি চাকুরিতে.. সরকারি চাকুরিতে গেলেও কখনো সেই লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি। তিনি বলেন, সাবিহ যেখানেই ছিলো সেখানেই দেশের জন্য কাজ করেছে, জনগনের জন্য কাজ করেছে।সবচেয়ে বেশি আমার মনে পড়ে যে, যখন তিনি আমাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কাজ করেছেন তখন দেখেছি যে, তিনি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন।
শেখ হাসিনার শাসনমালে সাবিহ উদ্দিন ওই সময়ে সরকারের রোষানলে নির্যাতিত হওয়ার তুলে ধরেন বলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই সময়ে তার ওপরে প্রচন্ড আক্রমণও হয়েছিলো; রিয়াজ রহমান সাহেবের গুলি লেগেছিলো, সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিলো আর আরেকজনের যেন কে তার ওপরও আক্রমন হয়েছিলো। এই সময়গুলো আমরা পার করেছি। বহুবারই বিভিন্ন গ্রেফতার হওয়ার মুহুর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে… সে ভিকটিম হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু হয়নি। তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা যারা এক সাথে ছিলাম তাদের কাছে এটা বেদনার। সাবিহ‘র ছবিটা এখানে দেখে আতকে উঠলাম। আজকে সে থাকলে সবচেয়ে খুশি হতো ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখে।
অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বলেন, সাবিহ শেষ দিন পর্যন্ত দেশের কথাটি ভেবেছেন, দশের কথাটি ভেবেছেন। তার মধ্যে স্বার্থপরতা ছিলো। দেশপ্রেমের প্রশ্নের কোনো আপোষ তিনি করেননি। বাংলাদেশে খুব মানুষই পাবে যে, আপন স্বার্থ ভুলে দেশ ও জনগনের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা। তিনি সব সময়ে এটা লালন করেছেন। আমি বিশ্বাস করব, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ জান্নাতবাসী হয়েছেন। জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে আল্লাহ রাব্বুল‘আলামীন স্থান দিয়েছেন।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারের কনফারেন্স হলে প্রয়াত কুটনীতিকের পরিবারের পক্ষ থেকে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবিহউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে সাবিহউদ্দিন আহমেদ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়েন সঙ্গে সম্পৃক্ত হন সাবিহ উদ্দিন লেখাপড়া শেষে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। তিনি তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন সাবিহ উদ্দিন।
জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি জ্বালানি মন্ত্রী আকবর হোসেন, এইচএম এরশাদের আমলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খানের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।পরে ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হন সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। সেই দায়িত্ব পালন শেষে আবার তথ্য ক্যাডারে ফিরে যান। ২০০১ সালে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির রাজনীতি সক্রিয়ভাবে যোগ দেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলে সদস্য ছিলেন।
প্রয়াত সাবিহ উদ্দিন বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ওপরে স্মৃতিচারণ করেন প্রবীণ সম্পাদক শফিক রেহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মাহফুজ এনাম, এবিএম শাহেদ আখতার, প্রয়াত সাবিহ উদ্দিন আহমেদর ছোট ভাই সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ অবসরপ্রাপ্ত কুটনীতিক, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকগণ।
প্রয়াত সাবিহ উদ্দিনের সহধর্মিনী রওনক আহমেদ, ছেলে সাইয়াব আহমেদ, বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগমসহ নিকট স্বজনরাও ছিলেন স্মরণ সভায়।
ভিন্নবার্তা ডটকম/আরজে/এন