নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে এভারগ্রীণ প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরী বিডি লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা। শনিবার সকাল ৭টা থেকে বিক্ষোভে নামেন তারা।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলাকালে পাঁচটি কাভার্ড ভ্যান, অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল, বিভিন্ন কাগজপত্রসহ কম্পিউটারে অগ্নিসংযোগ করেন শ্রমিকরা।
উত্তরা ইপিজেড, নীলফামারী ও সৈয়দপুর দমকল বাহিনীর তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বেলা ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নিবৃত্ত হন শ্রমিকরা।
এভারগ্রীণ প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরী বিডি লিমিটেডে কর্মরত শ্রমিকদের অভিযোগ, বেপজার বিধি লঙ্ঘন করে সময়ে-অসময়ে শ্রমিক ছাঁটাই করেন কর্তাব্যক্তিরা। করোনার সময়ে ওই ছাঁটাইয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। কারখানার অর্থ বাঁচাতে তারা দক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করে নতুন শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। ছাঁটাই হওয়ারা অসহায় হয়ে কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হলে তাদের নতুন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেন। এতে নায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান সরবরাহ করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। মাস শেষে স্বল্প মূল্যের এসব উপকরণ বাবদ প্রত্যের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে কেটে নেয়া হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, শ্রমিকরা ওভারটাইম কাজ করলেও সঠিক মজুরি থেকে বঞ্চিত। মাস শেষে তাদের হিসাবে অতিরিক্ত কাজের কর্মঘণ্টা কম দেখিয়ে মজুরী কম দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারখানায় কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, এসব সমস্যা দীর্ঘদিনের। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে চাকরি হারাতে হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সমস্যা আরো বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় নামতে হয়েছে আমাদের।
ওই শ্রমিকদের দাবি, স্বাভাবিক সময়ে কারখানায় ১৭ হাজার শ্রমিক কাজ করলেও করোনার সময়ে ছাঁটাই করার কারণে বর্তমানে সাত হাজার কাজ করছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ বিষয়ে ওই কারখানার কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম আতিকুর রহমান বলেন, এ অসন্তোষ যের ছড়িয়ে না যায় সে জন্য আমারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি এবং আল্লাহর রহমতে সমাধানে আমরা সফল হয়েছি। এখানে আসলে শ্রমিকরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাদের উত্তেজিত করতে পারে এমন কোনো কাজ আমরা করিনি। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে আমরা ফেরৎ পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে উত্তরা ইপিজেডের জেনালের ম্যানেজার মো. এনামূল হক বলেন, শ্রমিকদের দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলে সমাধান করা হবে। ইপিজেডে এই একমাত্র কোম্পানিতে সমস্যা আছে, অন্যান্য কোম্পানিগুলো বেপজার আইন অনুযায়ী সব কিছু করেন। এখানেই একটু সমস্যা আছে, আমি মনে করি এটা আলোচনা করে অবশ্যই সমাধান করা সম্ভব। এরই মধ্যে মালিক বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে ওয়ার্কারদের মাঝে তুলে ধরেছেন। উনি নিজেও ক্ষমাও চেয়েছেন এবং বিষয়গুলো সমাধান করবেন বলে বলেছেন। ইতিমধ্যে মালিক পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সকল দাবি বিবেচনা আশ্বাস দিয়েছে। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে একদিকে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আরেক দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হয়েছে। সবাইকে নিয়ে মিনিমাইজ করার পর শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে ফিরে গেছেন। মালিকপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, দাবিগুলো তারা বাস্তবায়ন করবেন। তাদের নিজ ম্যানেজমেন্ট কোনো ঘাটতি থাকলে সেটিও সমন্বয় করবেন।