টানা তৃতীয় দিনে দর হারাল বেশিরভাগ শেয়ার। কিন্তু বাজার মূল্য সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বধারা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বুধবার লেনদেন আবারও ২ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দুপুর দেড়টা পর্যন্ত স্বাভাবিক সাড়ে তিন ঘণ্টার লেনদেনে ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। পরের ক্লোজিং সেশনের ১০ মিনিটের তা বেড়ে ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা গত চার মাসের সর্বোচ্চ। এর আগে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ঢাকার এ শেয়ারবাজারে ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল।

একই সঙ্গে প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্সও আজ ৪৩.৯০ পয়েন্ট বেড়ে উঠেছে ৫৮৭৩ পয়েন্টে। গত ১৪ জানুয়ারির পর এটাই সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। ওইদিন সূচক ছিল ৫৯০৯ পয়েন্টে।

সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলেও টানা তিন দিন ধরে কমছে বেশিরভাগ শেয়ার। এই তিন দিনে মূলত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা খাতের শেয়ারদর ও লেনদেন বাড়ছে। বাকি সব খাতে রয়েছে বিপরীত ধারা।

ডিএসইতে ১৩২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে, যেখানে দর হারিয়েছে ১৭৬টি এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ৫৬টির দর। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতে ১২৬ শেয়ার ও ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৪৪টির দর কমেছে। এ বাজারে কেনাবেচা হয়েছে ১৩২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার।

ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংক খাতের ৩১ কোম্পানির মধ্যে ৩০টির লেনদেন হয়েছে, যার সবগুলোরই বাজারদর বেড়েছে। সব শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় খাতটির বাজার মূলধন বেড়েছে ২.৯৫ শতাংশ।

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২৩টি। এর মধ্যে ২২টির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে আজ, যার ১৯টিরই দর বেড়েছে এবং দর কমেছে মাত্র একটির।

তবে বীমা খাতের শেয়ারদরে কিছুটা মিশ্রধারা দেখা গেছে। খাতটির ৫০ কোম্পানির মধ্যে আজ ৪৯টির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যার ২৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ২০টির। মিশ্রধারা ছিল মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও। ১২টি ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৩টির দর কমেছে, অপরিবর্তিত ১১টির দর।

মিশ্রধারা ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের। এ খাতের ৯ শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে ১০টির। এর বাইরে বড় খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশল খাতের ৪ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৭টিই দর হারিয়েছে।

ওষুধ ও রসায়ন খাতের মাত্র ২টি শেয়ারের দর বেড়েছে, বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৩টি। একই চিত্র সবচেয়ে বেশি কোম্পানি খাত বস্ত্রে। এ খাতের ৫৬ কোম্পানির মধ্যে আজ ৫৫টির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬টির দর বেড়েছে, কমেছে ৪৩টির দর।

খাতওয়ারি লেনদেনে বরাবরের মত বীমাই সবার ওপরে আছে। আজ এ খাতের ৪৬৫ কোটি টাকার (ব্লক ছাড়া) শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ২২.৩০ শতাংশ। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে ব্যাংক। গতকাল এ খাতের ৩৩৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হলেও আজ তা বেড়ে ৪৫৮ কোটি টাকায় উঠেছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ২১.৯৪ শতাংশ।

ডিএসইতে আজ ৯ শতাংশের ওপর ১১টি কোম্পানির এবং ৫ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারদর বেড়েছে ৩০ কোম্পানির শেয়ারের। সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ করে দর বেড়েছে প্রিমিয়ার লিজিং (সর্বশেষ লেনদেন মূল্য ৭.৭০ টাকা) এবং প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স (১৬৭.২০ টাকা)।

দরবৃদ্ধির তালিকার এর পরের কোম্পানিগুলো হলো- দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স (৪৬.৫০ টাকা), সাউথইস্ট ব্যাংক (১৫.৫০ টাকা), জেনেক্স ইনফোসিস (৭১.২০ টাকা), খুলনা পাওয়ার (৪২.৩০ টাকা), ন্যাশনাল হাউজিং (৪১.৩০ টাকা), এনসিসি ব্যাংক (১৬.৯০ টাকা), ই-জেনারেশন (৫৫.৯০ টাকা), প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৬২.৫০ টাকা) এবং মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৭৪.৫০ টাকা)।

একক কোম্পানি হিসেবে দরপতনের শীর্ষে ছিল কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। বীমা কোম্পানিটির শেয়ার সাড়ে ৯ শতাংশ দর হারিয়ে সর্বশেষ ৫৫ টাকা ৪০ পয়সা দরে কেনাবেচা হয়েছে।

দরপতনে এর পরের অবস্থানে থাকা ক্রীস্টাল ইন্স্যুরেন্স পৌনে ৬ শতাংশ দর হারিয়ে কেনাবেচা হয়েছে ৬৩.৯০ টাকায়। ৫ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে দরপতনের শীর্ষ তালিকায় ছিল ঢাকা ডাইং (১৩.২০ টাকা), রানার অটোমোবাইলস (৫২ টাকা), এশিয়া ইন্স্যুরেন্স (১০০.২০ টাকা), ঢাকা ইন্স্যুরেন্স (৭৪.৯০ টাকা) এবং অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স (৫৩.৮০ টাকা)।

গত কয়েক মাস একক কোম্পানি হিসেবে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ডিএসইতে এ কোম্পানির (ব্লক ছাড়া) ১৭৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। ৩ টাকা ২০ পয়সা বেড়ে শেয়ারটি সর্বশেষ ৮৯ টাকা ২০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে।

লেনদেনে এর পরের অবস্থানে ছিল প্রাইম ব্যাংক, কেনাবেচা হয়েছে ৮২ কোটি টাকার শেয়ার। ৪০ পয়সা দর বেড়ে শেয়ারটি ২৬ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।

ভিন্নবার্তা ডটকম/এন