শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পালানো ছাড়া বীরত্বের কিছু দেখিনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে গিয়ে কত কথাই বলছেন। একদিন তার এক মন্ত্রী (তার পিতার নাম ধরে) বলেছিলেন, তার কন্যা কখনো পালায় না। আমরা তো শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পালানো ছাড়া বীরত্বের কিছু দেখিনি। ৭৫ এর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ বছর তিনি বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। তিনি তার পরিবারের যে হত্যাকাণ্ড আর প্রতিবাদ করতে এক বছর পরেই কিংবা ৬ মাস পরে দেশে আসতে পারতেন কিন্তু তিনি আসেননি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি দেশে ফিরতে পেরেছিলেন, আর দেশে ফিরেই তিনি ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। তিনি দেশে ফেরার ঠিক ১৩ দিনের মাথায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি রাজধানীর নয়াপল্টনে গুলিতে নিহত রিকশাচালক শহীদ মোহাম্মদ কামাল এর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার বাসায় যান এবং তার পরিবারকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছেন তার আত্মীয়স্বজনসহ। আজকে যারা এখন আড়ালে আবডালে শেখ হাসিনার জন্য অশ্রুপাত করছেন, তাদের মনে রাখা উচিত- তিনি হেলিকপ্টার দিয়ে নিজে পালিয়েছেন তার বোনকে নিয়ে। তার আত্মীয়-স্বজন সব পালিয়েছেন। আর আপনারা যারা নেতাকর্মী গত এই ১৭-১৮ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী আর প্রতিবাদী মানুষের উপর যুবলীগ-ছাত্রলীগের পোশাক পরে বা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কত নিপীড়ন নির্যাতন করেছেন, রক্তাক্ত করেছেন, তার কোন শেষ নেই। আপনারা আজকে তার জন্য মায়া কান্না করছেন!
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা তাকে জিজ্ঞেস করুন, তিনি আমাদেরকে ফেলে গেলেন কেন? আপনারা কেন আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন না? আওয়ামী লীগের ওই সমস্ত নেতাকর্মী এখন যারা অন্ধকারে বসে তার জন্য মায়া কান্না করছেন-তাদেরকে বলি, আপনাদের এক জেলার সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর সাথে কথা বলছেন, আপনারা কি বলতে পারলেন না- আপনি আপনার আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে গেলেন, বোনকে নিয়ে গেলেন, আপনার পুত্র তো আগেই দেশের বাইরে থাকে। আপনার কন্যা থাকে বিদেশে, আপনার আরো যে আত্মীয়-স্বজন কোথায় তারা? কোথায় সেই নিক্সন, হেলাল, তন্ময়, শেখ সেলিম? তারা তো কেউ বাংলাদেশে নেই। আত্মীয়-স্বজনকে নিরাপদ করে আপনি চলে গেলেন। জনগণের দুর্বার আন্দোলনের স্রোতে নেতাকর্মীদের ফেলে গেলেন কেন?
তিনি বলেন, পৃথিবীর যারা অসীম সাহসী নেতৃত্বে এবং দেশপ্রেমী হয় তারা নিজের দেশ রেখে নিজের নেতাকর্মীদেরকে ফেলে রেখে যায় না। বেগম খালেদা জিয়া কি পেরেছে?বেগম খালেদা জিয়াকে মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনরা কত চেষ্টা করেছে পারেনি। বেগম খালেদা জিয়া গেলেন না ওনার অদম্য দেশপ্রেমেরর কারণে। জনগণের প্রতি ওনার গভীর ভালোবাসার কারণে। সে কারণে দীর্ঘ ৬-৭ বছর কারাগারের মধ্যে রোগে শোকে কাতর হওয়ার পরেও তার কন্ঠ তার সাহস উদ্দাম। দেশের প্রতি ভালোবাসা এক অনবদ্য প্রেরণার অংশ হয়েছিল গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কোন ভাবে কাবু করতে পারেনি স্বৈরাচারী এরশাদ, শেখ হাসিনা বা মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনরা। কিন্তু আপনি দেশের পরিস্থিতি এবং আপনার অন্যায় অবিচারের কথা ঠিকই জানতেন, বুঝতে পেরেছিলেন, জনগণের স্রোত ধেয়ে আসবে। জনগণের ক্ষোভের যে প্রবাহ সেই প্রবাহে আপনার রাজ সিংহাসন উল্টে যাবে। ঠিকই উল্টে গেছে, আপনি পালিয়ে গেছেন আপনার বন্ধু প্রতিম দেশে। এটা কাপুরুষের কাজ। আওয়ামী নেতাকর্মীরা এটা কি দেখেন না, নিজের আত্মীয়-স্বজন, নিজের ছেলেমেয়েকে পার করে নিয়ে গেলেন, অথচ নেতাকর্মীদেরকে ফেলে চলে গেলেন।
রিজভী বলেন, আন্দোলন যখন বিজয়ের মুহূর্তে ঠিক সেই সময় রিকশাচালক কামালসহ আটজন পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। এরা গণতন্ত্রের বিজয়পুত্র। এরা গণতন্ত্রের এক অনন্য অসাধারণ সারথি, এদের চালিত রথেই আজ গণতন্ত্রের পতাকা উড়ছে।
এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদুল কবির, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষারসহ রিকশাচালক কামালের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন