লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি বোমা হামলা চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রথমবারের মতো দেশটির রাজধানী বৈরুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ঘটনার পর বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দুই হাজার বাংলাদিশকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বৈরুতে ২ হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছে। বৈরুতসহ লেবাননের যেসব এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেসব এলাকা থেকে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, লেবাননের যেসব জায়গায় ইসরায়েল হামলা করছে সেসব জায়গা থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেড় থেকে দুই হাজার বাংলাদেশিকে নিরাপদ জায়গায় নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দূতাবাস এবং স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটি সহযোগিতা করছে।
বৈরুতের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে দুই শিশু ও এক নারী আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে লেবাননের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের শারিরিক অবস্থা ভালোর দিকে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবাননের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক বাংলাদেশি কর্মী লেবানন ছেড়ে গেছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের আগে সেখানে দেড় লাখ বাংলাদেশির বসবাস ছিল। বর্তমানে ৭০-৮০ হাজার বাংলাদেশি লেবাননে বসবাস করছেস। এদের বেশিরভাগই আবার অবৈধ কর্মী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা এবং স্টাফ মিলে ৭-৮ জন রয়েছেন। বৈরুতে তাদের পরিবারসহ সংখ্যাটা ১৫ জন হবে। রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের সকল কর্মী এবং তাদের পরিবারকে বৈরুত শহরের আশপাশে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অনুবিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। সেখানে বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খানও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিবকে লেবাননের পরিস্থতি, বাংলাদেশি নাগরিকদের অবস্থান, দূতাবাসের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। পরে সচিব দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের দেখভালের বিষয়ে সজাগ থাকার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শ দেন।
বৈঠকে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখনও বাংলাদেশি নাগরিকদের লেবানন থেকে দেশে ফিরেয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া লাগলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজ করবে।
লেবানন এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ভৌগোলিকভাবে দেশটির উত্তর ও পূর্বে সিরিয়া, দক্ষিণে ইসরায়েলের (ফিলিস্তিন) সীমানা দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর ও সাইপ্রাস। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশিদের দেশা ফেরাতে গেলে বেশ জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে লেবাননে কর্মী ভিসায় যান ২ হাজার ৫৯৪ জন। চলতি বছর প্রথম সাত মাসে গেছেন ৪ হাজার ২২৫ জন।
এদিকে, বৈরুতের স্থানীয় সময় শনিবার লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খান এক ভিডিও বার্তায় লেবাননে বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তিনি সেখানে কোনো বাংলাদেশি সমস্যার মুখোমুখি হলে দ্রুত বৈরুতে অবস্থিত দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের ফ্রন্ট ডেস্ক ৭১২১৭১৩৯, হটলাইন ৭০৬৩৫২৭৮, হেল্পলাইন ৮১৭৪৪২০৭ ফোন নম্বরে এবং beirut.mission@mofa.gov.bd এই ই-মেইলে প্রবাসীরা যোগাযোগ করতে পারবেন।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন