কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজিবপুরে দ্বিতীয় দফা বন্যায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার তিন লাখ মানুষ। গত কয়েক দিনের টানা ভারীবর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরী জেলার মানকারচর থানাধীন কালো নদী দিয়ে পাহাড়ী ঢল বাংলাদেশ অভ্যন্তরে রৌমারীর বড়াইবাড়ী সীমান্ত ঘেষাঁ জিঞ্জিরাম নদীতে মিলিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে । ফলে কৃষকের আউষ ধান, পাট, সবজি ক্ষেতসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বানের পানির তোড়ে গ্রামীণ সড়কগুলো ও ঘর বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। হাস-মুরগী, গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছে ভুক্তভোগীরা। বানের পানিতে বন্দবেড় ইউনিয়নের কুটিরচর, কান্দাপাড়া, টাঙ্গারীপাড়া, বাইশপাড়া, যাদুরচর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি, দিগলেপাড়া, নতুনগ্রাম, ধনারচর নতুনগ্রাম, চরের গ্রাম, মোল্লাপাড়া, পাখিউড়া, রৌমারী সদর ইউনিয়নের ঠনঠনিপাড়া, ভুন্দুরচর, বারবান্ধা, চুলিয়ারচর, চান্দারচর, নওদপাড়া, ব্যাপারী পাড়া, খাটিয়ামারী, রতনপুর, চরবামনেরচর, মোল্লারচর, শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলারচর, সুতিরপাড়, বোয়ালমারী, কলমেরচর, গয়টাপাড়া, চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী, খেদাইমারী, চরখেদাইমারী, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ইটালুকান্দা, চরগয়টাপাড়া ও ছাটকড়াইবাড়ীসহ শতাধিক গ্রামের মানুষ পানি বন্দী হয়ে আছে। তারা হাট-বাজারও করতে পারছে না। এমনকি চরশৌলমারী, টাপুরচর, সায়দাবাদসহ বেশ কয়েকটি হাট-বাজারে পানি উঠে বাজা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।
বাঁধের পশ্চিম পাশের চরাঞ্চলীয় নদী পারের মানুষ আশ্রয় নিয়েছে অরক্ষিত উচু জায়গা রাস্তার স্লোভে নানা উপায়ে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সমস্যায় পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানির প্রচণ্ড চাপে উপজেলা শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ ও ঢাকার সাথে যোগাযোগের প্রধান ডিসি সড়কটি কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ হয়েছে। যেকোন মূহূর্তে সড়কটি ভেঙে বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে । যদি তা ই হয় তাহলে এখানকার মানুষের জন্য নেমে আসবে চরম দুর্ভোগ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন ভিন্নবার্তা ডটকমকে জানান, আগের বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় রোপা আমন বীজতলা করেছিলেন। কিন্তু আবারো নতুন করে বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষকদের অনেক ক্ষতি হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের নামের তালিকা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান ভিন্নবার্তা ডটকমকে বলেন, নতুন করে বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় এলাকার অনেক ক্ষতি হবে। দিনমুজুর ও কৃষকরা আগের বন্যার ধকল থেকে না উঠতেই আবারো বন্যা শুরু হলো। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬টি ইউনিয়নে ২৪ মেট্রিকটন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য প্রায় ৩শ’ খাদ্যের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে এবং যাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভিন্নবার্তা ডটকম/প্রতিনিধি/এসএস