বিতকির্ত লাদাখ সীমান্তে চীন নতুন নতুন অবকাঠামো তৈরি করছে বলে স্যাটেলাইট ইমেজে ধরা পড়েছে। শীতের কথা মাথায় রেখেই এসব অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
লাদাখের শুধু প্যাংগং অঞ্চলেই পাঁচ থেকে সাত হাজার সৈন্য জড়ো করেছে চীন এবং ভারত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দু’পাশে দুই পক্ষই যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি হয়ে আছে। এই মুহূর্তে লাদাখের বিভিন্ন সীমান্তে ৫০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় সেনা রয়েছে। সেনাবাহিনী বলছে, সমসংখ্যক সেনা আছে চীনের প্রান্তেও। তবে এরই মধ্যে প্যাংগং লেকের উত্তর অংশে ফিঙ্গার পয়েন্ট চারে একটি পাহাড়ে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
যেখান থেকে ফিঙ্গার পয়েন্ট চারের অন্যদিকে চীনা সেনার চলাফেরা দেখা সম্ভব। সম্প্রতি প্রকাশিত স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যাচ্ছে, প্যাংগংয়ের উত্তর প্রান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নতুন করে বিপুল পরিমাণ কাঠামো তৈরি করেছে চীন।
গত দুই দিনে লাদাখে ভারত এবং চীনের সেনার মধ্যে বড় কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় প্রতিদিনই দুই পক্ষের মধ্যে ছোটখাটো সংঘাত হচ্ছে। সীমান্তের দু’পাশ থেকেই শূন্যে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তবে হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বস্তুত, দু’পক্ষই যুদ্ধের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, চীন এলএসির খুব কাছে অন্তত ১৫০টি যুদ্ধবিমান মজুত করেছে। এর মধ্যে ফাইটার, হেলিকপ্টার, ইলেকট্রনিক ওয়ার্নিং অ্যাসেট রয়েছে। এ ছাড়াও ট্যাঙ্কার এবং সারফেস টু এয়ার মিসাইল রয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, তারাও সমপরিমাণ বিমান এবং যুদ্ধাস্ত্র লাদাখ সীমান্তে রেখেছে। লে বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধবিমান রাখা হয়েছে। লে থেকে প্রতিদিন হেলিকপ্টার সীমান্তে টহল দিচ্ছে।
ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, লে থেকে একটি ফাইটার চীন সীমান্তে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র আট মিনিট। ১৬ মিনিটের মধ্যে ফাইটারটি আবার লে বিমান বন্দরে ফিরে আসতে পারে। এছাড়াও ভারতের হাতে এখন পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমান আছে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে যা বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।
ফরাসি মন্ত্রীও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন। রাফাল কী কী করতে পারে, তার মহড়া দেখানো হবে আম্বালার বিমানঘাঁটিতে। আরও বেশ কয়েকটি রাফাল কিছু দিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে ভারতে।
লাদাখের স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সীমান্তে এখনও তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। যে কোনও সময় বড় কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে প্যাংগংয়ের দক্ষিণ প্রান্তে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। চীন এবং ভারতের সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এরই মধ্যে প্যাংগংয়ের উত্তর প্রান্তে ফিঙ্গার পয়েন্ট চারে নতুন একটি উচ্চতার দখল নিয়েছে ভারতীয় সেনা। সেখান থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্যদিকে চীনের সেনার কার্যকলাপ দেখতে পাওয়া যায়।
সেপ্টেম্বর মাসের একটি স্যাটেলাইট চিত্রও ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে এসেছে। এতে দেখা যাচ্ছে ফের প্যাংগংয়ের ধারে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিপুল পরিমাণ কাঠামো তৈরি করেছে চীনের সেনা।
শুধু লাদাখ নয়, সিকিম এং অরুণাচলেও সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করে রেখেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এছাড়াও উত্তরাখণ্ডে নেপাল-ভারত-চীন সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করে রাখা হয়েছে।
যুদ্ধ কি আসন্ন
মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাদাখে মুখোমুখি অবস্থায় আছে ভারত এবং চীন। এতদীর্ঘ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ডোকলামেও হয়নি। ফলে বার বার বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে যুদ্ধ কি হবেই? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সরাসরি যুদ্ধে কোনও দেশই যেতে চাইছে না। ফলে বার বার আলোচনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কোনো আলোচনাই এখনো পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি।
এর মধ্যে ফের একটি উচ্চপদস্থ সেনা বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে কোনো দেশই যে নিজেদের জায়গা ছেড়ে পিছিয়ে আসবে না, তা মোটামুটি স্পষ্ট। ভারতের দাবি, যেভাবে চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছে যুদ্ধ বিমান এবং মিসাইল মজুত করেছে, তা মেনে নেয়া যায় না। তারা যদি সমারাস্ত্র পিছিয়ে নেয়, তাহলে পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কোনও দেশই যুদ্ধ সরঞ্জাম পিছতে রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, শীত চলে এলে লাদাখের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে রসদ পরিবহন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এত সেনার খাবার এবং যুদ্ধাস্ত্র পরিবহন করা কঠিন। ফলে আগে থেকেই সেনাবাহিনী সব কিছু মজুত করে রেখেছে এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
উৎপল ভট্টাচার্যের কথা থেকেই পরিষ্কার, কেন দুই দেশ এই পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র এবং সেনা সীমান্তে জমিয়ে রেখেছে। কেন প্রতিদিন কাঠামোর সংখ্যা বাড়ছে। দুই পক্ষই শীত মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করবে লাদাখে। বরফ পড়তে শুরু করবে। আগে থেকেই তার প্রস্তুতি নিয়ে না রাখলে সেনা জওয়ানরা সমস্যায় পড়বেন। ফলে এই পরিস্থিতিতে কোনও পক্ষই যুদ্ধের সরঞ্জামও পিছিয়ে নিতে রাজি হবে না। ডিডব্লিউ।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই