সাইদুল ইসলাম : যানজট নিরসনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক দীর্ঘ ২৯ বছর আগে নেয়া প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি । মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংযোগ সড়ক হিসেবে কর্তৃপক্ষের ব্যায়ে চারটি সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে অন্যতম মিরপুর কাজিপাড়া-গাবতলী ও মিরপুর দারুস সালাম (আনসার ক্যাম্প) থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত নতুন রাস্তু নির্মাণ। সব মিলিয়ে ৬০ কিলোমিটার লম্বা এবং ১০০ ফুট চওড়া সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু পরিকল্পনার প্রায় ২৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এসব রাস্তা নির্মাণ হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি, অর্থ সংকট, ঠিকাদারের দায়সারা কাজ, দফায় দফায় পরিকল্পনা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় এ প্রকল্প আটকে আছে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার যানজটের মূল কালণ পর্যাপ্ত সড়ক না থাকা। অথচ একটি আদর্শ শহরে মোট এলাকার ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। যে কারণে নগরীতে যানজট প্রকট আকার ধারন করছে। জনসংখ্যার অনুপাতে শহর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে ঢাকাকে একটি আধুনিক ও আদর্শ শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রণীত স্ট্র্যাটেজিক প্লান (এসটিপি) এর আলোকে ২৯ বছর আগে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে রাজউক। প্রকল্পটির আওতায় কাজিপাড়া-গাবতলী ও দারুস সালাম সড়ক (আনসার ক্যাম্প) থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত নতুন সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে ট্রাফিক করিডর তৈরি করারও কথা ছিল। ৪’শ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে এ সড়ক বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। যদিও এখন সব কিছুর দাম বাড়ায় তা বাস্তবায়নে ব্যায় আরো কয়েকগুন বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও যানজট নিরসনে ১৯৯৫ সালে রাজউকের একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়। সেই প্ল্যানের আওতায় ওই সময় ঢাকায় নতুন চারটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় একটি সড়ক নির্মিত হয়েছে। বাকি তিনটি নানা জটিলতায় নির্মাণ করতে পারেনি রাজউক। তবে সম্প্রতি এসব সড়ক নতুন করে নির্মাণের আবারো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে রাজউক জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। এদিকে, সড়ক নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গায় নানা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস ও ব্যবসা চালাচ্ছে অসাধু একটি মহল। এতে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে কবে নাগাদ এসব সড়কের কাজ শুরু হবে এ নিয়েও রয়েছে নানা সংশয়।
রাজউক জানায়, ২৯ বছর আগে নেয়া প্রকল্প অনুযায়ী নগরীর যানজট নিরসনে মিরপুর কাজিপাড়া-গাবতলী ও দারুস সালাম সড়ক (আনসার ক্যাম্প) থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত নতুন সড়ক শিগগিরই কাজ শুরু হবে। আর এ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিম এলাকার ট্রাফিক করিডর ও উন্নত রোড নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে। এছাড়া, এ সড়ক নির্মিত হলে মিরপুর, আহমেদ নগর, বড়বাগ, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কাফরুলসহ ওই অঞ্চলের বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যানজট কমবে। পাশাপাশি মিরপুর রোড ও রোকেয়া সরণির বাইরে সেন্ট্রাল ঢাকা থেকে মিরপুর যাওয়ার একটি প্যারালাল সড়ক তৈরি করারও চিন্তা করছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে, এ প্রকল্পের মধ্যে রাজধানীর কুড়িল থেকে বালু নদের ব্রিজ হয়ে শীতলক্ষ্যার কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত দু’শ ফুট চওড়া ১৩ কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণকাজও শুরু করতে পারেনি রাজউক। আর এ প্রকল্পের আওতায় যানজট নিরসনে মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত- সংযোগ সড়ক এবং হাজারীবাগ কালুনগর সড়কটি বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সমপ্রসারণের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি রাজউক। এ প্রকল্পের মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজিপাড়া-গাবতলী ও মিরপুর দারুস সালাম (আনসার ক্যাম্প) থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত নতুন সড়ক। কিন্তু এ সড়ক এখন পর্যন্ত নির্মিত না হওয়ায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত মিরপুর কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কাফরুলসহ ওই অঞ্চলের হাজার হাজার বসবাসকারীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অবিলম্বে এ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, আরো অনেক আগে এ সড়কগুলো নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এসব সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব সড়ক নির্মাণ করার কাজ চলছে। আশাকরি শিরই কাজ শুরু হবে।