প্রায় ৭০ বছর আগে বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস থমাস বেকন এমন একটি সবুজ জ্বালানি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন, যা শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, চাঁদে প্রথম পা রাখা অভিযানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজও তার আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের কাছে অনুপ্রেরণার এক উৎস।
কেমব্রিজের ‘ক্যামব্রিজ পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা বেকনের অসাধারণ এই অবদানের স্বীকৃতি দিতে তার সাবেক বাসভবনে একটি নীল ফলক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
বেকনের তৈরি হাইড্রোজেন-অক্সিজেন জ্বালানি সেল ‘বেকন সেল’ নামে পরিচিত। এটা অ্যাপোলো অভিযানের বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই জ্বালানি সেল অ্যাপোলো মিশনে বৈদ্যুতিক শক্তি, যোগাযোগ, শীতলীকরণ এবং আলো সরবরাহ করেছিল। পাশাপাশি এটি পানিও উৎপাদন করত, যা মহাকাশচারীরা পান করতেন।
১৯৬৯ সালে চাঁদে অবতরণের আগে বেকন বিবিসি রেডিও ৪-এ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সরবরাহ চালু থাকে এবং উৎপাদিত পানি সরিয়ে না নেওয়া হয়, ততক্ষণ এটি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
এই জ্বালানি সেলের উচ্চ কার্যক্ষমতা এবং শক্তি ঘনত্ব অ্যাপোলো অভিযানের সফলতায় বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বেকনকে বলেছিলেন, আপনার উদ্ভাবন ছাড়া আমরা চাঁদে পৌঁছাতে পারতাম না।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্যাম স্ট্রাংকস বলেন, বেকন ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন অগ্রগামী। মহাকাশ অভিযানের জন্য জ্বালানি সেল প্রযুক্তি অপরিহার্য ছিল। কারণ যথাযথ গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল।
বেকনের এই আবিষ্কার আজও নবায়নযোগ্য শক্তি, সৌরশক্তি এবং ব্যাটারি স্টোরেজের উন্নয়নে বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি দীর্ঘ দূরত্বের ট্রাক ও জাহাজের বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন চালাতে সহায়তা করতে পারে, যা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবস্থার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
বিবিসি রেডিওতে বেকন আরও বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল এটি যানবাহন চালানোর কাজে ব্যবহৃত হবে। আমি বিশ্বাস করি, এটি একদিন বাস্তবে রূপ নেবে।’ সূত্র : গার্ডিয়ান