মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাসের অনুসন্ধান টিমের খোঁড়াখুঁড়িতে ৬টি লিকেজ পাওয়া সেই পাইপের নেপথ্যে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। মাটি খুঁড়ে পাওয়া দুটি পরিত্যক্ত পাইপ লাইন আসলে কোন গ্রাহকের তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পরিত্যক্ত এই লাইন ব্যবহারকারীরা ২২ বছর আগেই অবৈধপন্থায় মূল লাইন বদল করেছিলেন বলে জানিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সেই অজানা তথ্য। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, সেই অকেজো গ্যাসের পাইপ থেকে কেন ২২ বছর পর গ্যাস নির্গত হয়েছে?
জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর লিকেজ পাওয়ার পর তিতাস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল- মসজিদের সামনের একটি বেইজ নির্মাণের সময় তিতাসের মূল পাইপটি (এক ইঞ্চি) ক্ষতিগ্রস্ত করেই বহুতল ভবনটি নির্মাণ করেছিল মসজিদ কমিটি। তবে অকেজো বা পরিত্যক্ত গ্যাস পাইপ লাইন দুটি ২২ বছর আগে সেখান থেকে সরিয়ে না ফেলার পেছনে তিতাস কর্তপক্ষকেই দায়ী করেছেন সেই মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর মেম্বার।
যদিও তিতাস কর্তৃপক্ষের দাবি, মূল লাইন বদলের সময় তিতাস অবশ্যই পূর্বের লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়- এটাই নিয়ম।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যে পাইপ থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা, সেই পাইপটি থেকে কোন বাড়িতে সংযোগ নেয়া হয়েছিল সেটি সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
তবে বায়তুস সালাত জামে মসজিদের সভাপতি আবদুল গফুর জানিয়েছেন, ২২ বছর আগে এই এলাকায় তিতাস গ্যাসের ১ ইঞ্চি মূল লাইন থেকেই আবাসিক সংযোগ নিত সবাই। ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে আরেকটি ৩ ইঞ্চি মূল লাইন স্থাপন হলে অনেকেই সেই লাইন থেকে সংযোগ নিতে শুরু করেন।
গফুর বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি মসজিদের সামনে মাটি খুঁড়ে যে দুটি পাইপ পাওয়া গেছে তার মাধ্যমে স্থানীয় শওকত, কুদ্দুস বেপারি ও আলী হাজী নামের তিন ব্যক্তির বাড়িতে গ্যাস লাইন ছিল। আমার জানা মতে- দুটি সংযোগেরই রাইজার খুলে বাহিরের পাইপের মুখবন্ধ করে দেয়া হলেও মূল লাইন থেকে পাইপটি বিচ্ছিন্ন না করাতেই মাটির নিচে পাইপ ক্ষয় হয়ে গ্যাস নির্গত হয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এটা তিতাসেরই দায়িত্ব ছিল মূল লাইন থেকে পাইপটি সরিয়ে নেয়া।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মফিজুল ইসলাম জানান, পৌনে এক ইঞ্চি ব্যসের যে গ্যাস লাইনে ছিদ্র পাওয়া গেছে, সেটি আশির দশকে তিনজন গ্রাহক টেনে নিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে একই পথ ধরে একটি তিন ইঞ্চি ব্যাসের লাইন যাওয়ার পর তারা পুরাতন লাইন থেকে নতুন লাইনে ‘শিফট’ করেছেন। অথচ মাটি খুঁড়ে পাওয়া দুটি লাইনের একটির রেকর্ডপত্র থাকলেও আরেকটির হদিস মেলেনি।
পরিত্যক্ত লাইনটি মূল লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন করার দায়িত্ব কার- এমন প্রশ্নের জবাবে মফিজুল ইসলাম জানান, আমরা যখন কোনো গ্রাহকের মূল লাইন থেকে অপর একটি মূল লাইনে সংযোগ দেই তখন পূর্বের লাইনটি (মূল লাইন থেকে) বিচ্ছিন্ন করে দেই, যাতে ওই লাইন থেকে কেউ আর সংযোগ নিতে না পারে। কিন্তু যে গ্রাহকরা ১ ইঞ্চি লাইন থেকে ২০ বা ২২ বছর আগে ৩ ইঞ্চি মূল লাইনে ‘শিফট’ হয়েছিলেন তারা তিতাস কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই কাজটি করেছিলেন। হয়তো ওই সময়ের স্থানীয় কোনো ঠিকাদারের সাহায্যে বা অন্য কোনো পন্থায় কাজটি করা হয়েছে। কারণ এখনও রেকর্ডপত্রে তারা ১ ইঞ্চি লাইনের গ্রাহক হিসেবেই আছেন। যার ফলে তারা রাইজার খুলে মুখ বন্ধ করলেও মূল লাইন থেকে পাইপটি বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি। কোনো কাজে না লাগলেও তাতে গ্যাসের প্রবাহ ছিল।
এ ব্যাপারে তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান আবদুল ওয়াহাব তালুকদার জানিয়েছেন, এখানে কোনো খাড়া পাইপ বা রাইজার ছিল না, সেটা সবাই দেখেছি। এক ইঞ্চি পাইপটি মাটির নিচে চাপা পড়েছিল। পূর্ব পাশে কোনো ছিদ্র পাওয়া না গেলেও উত্তর পাশের পাইপে ৬টি ছিদ্র পাওয়া গেছে। তাছাড়া মসজিদের উত্তর পাশের ৪নং খুঁটির কলাম করার সময় যে ফাউন্ডেশনের কাজ করা হয়েছে সে সময় মূল সরবরাহ গ্যাস লাইনের রেপিন নষ্ট করে ফেলে; যা দীর্ঘদিন মাটির সংস্পর্শে এসে ফুটো বা ছিদ্র হয়েছে। সেখান থেকে লিকেজ হয়ে গ্যাস নির্গত হয়েছে এবং অন্যান্য ৬টি জায়গায় লিকেজ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেখানে ১ ইঞ্চি থেকে ৩ ইঞ্চি লাইনে (পাইপে) একটি সংযোগ শিফট করা হয়েছিল সেখানে একটি লাইনের দলিলপত্র বা রেকর্ড পেলেও অন্য একটি শিফট হওয়া লাইনের কোনো রেকর্ড আমাদের কাছে নেই। এর মানে ওই লাইন ব্যবহারকারী বা বাড়িওয়ালা স্থানীয় কোনো মেকানিজমে লাইনটি শিফট করেছিলেন।
ভিন্নবার্তা/এসআর