নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনায় ভূট্টা চাষ সম্প্রসারণ ও ভূট্টার খড় থেকে সাইলেজ (প্রাণি খাদ্য) তৈরীর পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষকদের নিয়ে ছয়মাস মেয়াদী কর্মসূচি সফলতা লাভ করেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ এ. কে. এম. আহসান কবির ভূট্টা গাছ হতে ভূট্টার দানা সংগ্রহ করার পর গাছের কান্ড ও পাতা দিয়ে সাইলেজ তৈরী করার প্রকল্পটি আবিস্কার করেন।
পাইলট প্রকল্পটি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলায় বাস্তবায়িত হওয়ায় বেসরকারি সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ স্থানীয় কৃষকদের অংশগ্রহণে নায়েকপুর ইউনিয়নের রাজতলা গ্রামে ভূট্টা চাষ সম্প্রসারণ ও ভূট্টার খড় থেকে সাইলেজ তৈরী বিষয়ক শিখন বিনিময় কর্মসূচির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেয়ার বাংলাদেশ সৌহার্দ-৩ প্লাস কর্মসূচির সিনিয়র টিম লিডার মান্নান মজুমদার। এ সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ এ. কে.এম. আহসান কবির পাইলট উদ্যোগের বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেত্রকোনার অতিরিক্ত উপপরিচালক শস্য মো; আব্দুল আওয়াল,জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: আবুল বাশার,মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হাবিবুর রহমান,মদন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: তায়রান ইকবাল। কেয়ারের টেকনিক্যাল ম্যানেজার মিঠু রানী চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথিরা আলোচনায় তাদের অভিজ্ঞতা এবং মূল্যবান মতামত ব্যাক্ত করেন এবং এটিকে সময়ইপয়োগী উদ্যোগ হিসাবে বর্ননা করেন।
ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে কেয়ার বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত সৌহাদর্য-৩ প্লাস কর্মসূচি ” ভূট্টা চাষ সম্প্রসারণ ও ভূট্টার খড় থেকে সাইলেজ” তৈরী বিষয়ক শিখন বিনিময় কর্মসূচি ২১ এপ্রিল রোববার আয়োজন করে। অধ্যাপক ডঃ এ. কে. এম. আহসান কবির, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর সার্বিক সহযোগিতায় ভূট্টার খড় থেকে সাইলেজ ” তৈরীর পাইলট প্রকল্পটি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়। ছয়মাস মেয়াদী পাইলট প্রকল্পের ফলাফল এবং শিখন বিনিময় করাই উক্ত কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।
সৌহাদর্য-৩ প্লাস কর্মসূচি সাইলেজ উৎপাদনের জন্য একজন অংশগ্রহণকারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসাবে তৈরী এবং উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করে। উৎপাদিত সাইলেজ মানসম্পন্ন ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় খামারীগন তা ভালভাবে গ্রহন করে। এই পদ্ধতিতে ভূট্টা গাছ হতে ভূট্টার দানা সংগ্রহ করার পর গাছের কান্ড ও পাতা দিয়ে সাইলেজ তৈরী করা হয়। যার ফলে একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তেমনি শস্য উপজাত ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ভালো হবে এবং তুলনামূলক কম মূল্যে প্রাণি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যেটি সারাবছর ধরে যে কোন পরিস্থিতিতে গবাদী প্রাণির মান সম্মত আঁশ জাতীয় খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এর ফলে সারা বৎসর গবাদী প্রাণির স্বাস্থ্য ভাল থাকবে ও এর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
এই উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভূট্টার চাষ সম্প্রসারনের জন্য ১৬ জন কৃষককে সার, বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে। ফলে কৃষক অধিক লাভবান হয়েছে। ভূট্টা সংগ্রহের পর গাছ সাইলেজ তৈরীর প্রধান কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ভূট্টা চাষী হাদিস মিয়া বলেন যে, এবার আমি প্রথম ভূট্টা আবাদ করেছি এরং ধানের চেয়ে দ্বিগুণ মুনাফা করেছি।” স্থানীয় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি ইতিপূর্বে ভূট্টা আবাদ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না-সৌহার্দ-৩ প্লাস কর্মসূচির উদ্যোগের কারনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী মেীসুমে আমার জমিতে ভূট্টা আবাদ করবো”। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত উপপরিচালক শস্য,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেত্রকোনা মো; আব্দুল আওয়াল, কেয়ার বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামী বৎসর আরও অধিক কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার অঙ্গিকার করেন। মদন উপজেলা কৃষি অফিসার, মো: হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষক যা করতে চায় তার জন্য যান্ত্রিক সেবা উপজেলা কৃষি অফিস দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আবুল বাশার কেয়ারকে ধধ্যবাদ দেন এই বলে যে উদ্যোগটি গবাদীপ্রাণি পালনের এক সমস্যার সমস্যার যুগোপযোগী সমাধান। সিনিয়র টিম লিডার, সৌহার্দ-৩ প্লাস কর্মসূচি, কেয়ার বাংলাদেশ মান্নান মজুমদার বলেন,এই কাজে কেয়ার বাংলাদেশ সমন্বয়ক এর ভূমিকা পালন করেছেন-যেখানে ভূট্টা চাষী, সাইলেজ উৎপানকারী, কূষি বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ,প্রাণি খাদ্য বিক্রেতা একত্রিত হয়েছে। আশা করছি আগমী দিনে এর বিস্তৃতি ঘটবে।”
উক্ত অনুষ্টানে বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষে,কামরুল হোসেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সৌহার্দ-৩ প্লাস কর্মসূচি, পপি পাইলট প্রকল্পের সম্ভবনার কথা বলেন। এছাড়া কেয়ার বাংলাদেশের পক্ষে মো: রফিকুল ইসলাম,প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর-টেকনিক্যাল সৌহার্দ-৩ প্লাস কর্মসূচির পাইলট প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে খামাররি, প্রাণিখাদ্য বিক্রেতা, বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, এনজিও কর্মকর্তা সহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। নায়েকপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: হাদিস মিয়া অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। আলোচনায় উপস্থিত বক্তাগণ উদ্যোগটিকে একটি সময় উপযোগী, পরিবেশ বান্ধব, দূর্যোগের সময় ব্যবহার উপযোগী গবাদিপ্রাণির খাদ্য হিসাবে বর্ননা করেন এবং আরোও উদ্যোক্তা তৈরীর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্টির কাছে পৌছানোর পরামর্শ প্রদান করেন।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন