পুলিশ নিয়ে দেশে যখন সমালোচনার অন্ত নেই। ব্যক্তি বিশেষের দায় যখন গোটা পুলিশ বাহিনীকে কালিমা লেপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন এক ব্যতিক্রম ও জনবান্ধব উদ্যোগ নিয়ে মানুষের দৌড়গোড়ায় উপস্থিত হয়েছে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ। মানুষকে এখন আর থানামুখী হতে হচ্ছে না। শহর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালিত করতে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মাহানুভবতার ডালি নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর নির্দেশে জেলা ব্যাপী জুয়ার আসর বন্ধ হয়েছে।
থানায় থানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে নিতে আর টাকা দিতে হয় না। বন্ধ হয়েছে গ্রেফতার বানিজ্য ও সাধারণ মানুষকে হয়রানী। চরমপন্থি নেই। দস্যুদের আস্ফালন কমেছে। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শৃংখলা ও জবাবদিহীতার মধ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে জেলার ৬ থানা ও ৩০টি পুলিশ ক্যাম্পকে। কোন পুলিশের কিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তাকে বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানের দরদ মেশানো ভালবাসা, হাসি মুখে অমায়িক ব্যবহার, মমত্ববোধ ও মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট ঝিনাইদহ পুলিশকে এক উচ্চ চুড়ায় নিয়ে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ঝিনাইদহ থেকেই শুরু হবে পুলিশের মধ্যে এক ব্যতিক্রম ধারা।
ইতিমধ্যে জেলার ৬ থানা ও ৬৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মোট ৮৫ টি বিটে বিভক্ত করে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রতি বিটে ১ জন এস আই, এক জন এএসআই এবং ২ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। বিট পুলিশিং ব্যবস্থায় তাৎক্ষনিকভাবে এবং দ্রæততার সাথে মানুষ সহজে পুলিশের সেবা পাচ্ছে। তারা তাদের অভিযোগ অবলীলায় বর্ননা করতে পারছে। পুলিশের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি থানায় ইউনিয়ন ভিত্তিক বা মেট্রোপলিটন এলাকার ওয়ার্ড ভিত্তিক এক বা একাধিক ইউনিটে ভাগ করে পরিচালিত পুলিশ ব্যবস্থা কে বলা হয় ‘বিট পুলিশিং”। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি বিটের দায়িত্ব¡ প্রদান করে এক বা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পুলিশের সেবা জনগণের কাছে পৌছে দেওয়া পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল, ১৯৪৩ এ বিট পুলিশিং এর কথা উল্লেখ আছে।
পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১০ সালে তাঁর উদ্যোগে ঢাকা মহানগর এলাকায় বৃহত্তর পরিসরে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়। পুলিশি সেবাকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে বর্তমান ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ জেলা পর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশের বেশ কিছু ইউনিট এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সব জেলার মেট্রোপলিটন এলাকায় বিট পুলিশিং বাস্তবাযয়িত হলে জনগণ ব্যাপক ভাবে উপকৃত হবে এবং পুলিশ জনগণের আস্থা ও ভরসাস্থলে পরিণত হবে।
বর্তমান আইজিপি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় ইতোমধ্যে বিট পুলিশিং কার্যক্রম সংক্রান্ত গাইডলাইন তথ্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর ২০২০ প্রণীত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে বিট অফিসার ও তার টিমের সদস্যগণ বিট এলাকায় বেশিরভাগ সময় অবস্থান করবে। এলাকার অপরাধ দমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিট এলাকায় সংঘটিত অপরাধ বিশেষ করে খুন ডাকাতি ধর্ষিতা নারী নির্যাতন ইত্যাদি সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে অব্যাহত অফিসার ও তার টিমের সদস্যগণ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল ও এলাকার অপরাধীদের তালিকা তৈরিসহ নজরদারি করবেন।
চোরাকারবারি চিহ্নিত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ মানবপাচারকারী ভূমিদস্যু নারী উদ্যোক্তার জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তি চোর-ডাকাত ছিনতাইকারী ও অভ্যাসগত অপরাধীদের তালিকা তৈরি করবে। তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। মূলকথা হলো বিট পুলিশিং ব্যবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে এবং দ্রুততার সাথে মানুষ পুলিশের সেবা পাবে। থানার সঙ্গে প্রত্যন্ত অ লের মানুষের নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিট পুলিশিং কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। প্রতিটি স্তরেই জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তদারকি করবেন। এতে করে মানুষের মধ্যে অপরাধ ভীতি দূর হবে। মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডও হবে নির্বিঘ্ন এবং নিরাপদ। ঝিনাইদহে বিট পুলিশিং নিয়ে মানুষের মধ্যে আশার আলো হয়ে উঠেছে। অসহায় ও সমাজে ক্ষমতাহীনরা বিদ্যমান এই ব্যবস্থার সুফল পেতে উদগ্রীব হয়ে আছে।
ভিন্নবার্তা/এসআর