আজকের আধুনিক শহরগুলো এক সময় অপরিকল্পিত শহরের তালিকায় ছিল। এখন সেগুলো আধুনিক হয়েছে। পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আমরা শহরগুলো আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছি।
উন্নত দেশসমূহে অনেকেই অর্থবান হলেও গাড়ি কেনার প্রতি আগ্রহী হন না। আমাদেরও অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার পরিহার করতে হবে। এর বদলে হাঁটা এবং সাইকেলবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। দু’দিনব্যাপী ‘ইকোসিটি স্যাটেলাইট কনফারেন্স ঢাকা-২০২০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তাগিদ দেন।
বুধবার ভাচুর্য়ালে পদ্ধতিতে সম্মেলনের আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ডাবি-উবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান। বিশেষ অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেলথ ব্রিজ কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এবং সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের সালমা এ শফি।
অধিবেশন পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউশন অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে ভাবনার নতুন পথ দেখিয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এবং আমাদের প্রাণ-প্রকৃতির অস্তিত্ব রক্ষার লক্ষ্যে আমাদের জলাভূমি-জলাধার রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের সবুজ উদ্যান-উন্মুক্ত গণপরিসর রক্ষা ও এগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হতে হবে।
খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন বিভিন্ন মাধ্যমে যাতায়াত সংগঠিত হয়। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ ট্রিপ ২ কিলোমিটারের মধ্যে সংঘটিত হয়। যার অধিকাংশ হাঁটার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। কিন্তু সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা যদি স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতে হেঁটে, সাইকেলে চলাচল করি এবং আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি তাহলে একদিকে যেমন গাড়ি নির্ভরতা কমিয়ে যানজট নিরসন করতে পারব, পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের এ কনফারেন্সের সাথে দেশের ৫০টি শহর সম্পৃক্ত হয়েছে। ইকোসিটি বলতে এমন শহরকে বোঝায়- যেখানে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ একই সঙ্গে প্রাধান্য পায়। ইকোসিটি ওয়ার্ল্ড সামিটের লক্ষ্য হল- স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে টেকসই এবং আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচার সম্পন্ন শহর তথা, ইকোসিটি গড়ে তোলা।
বিশেষ অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় দেবরা ইফরইমসন বলেন, নগর পরিকল্পনায় পরিবেশের যে অনুপস্থিতি ছিল কোভিড-১৯ এর সময় আমরা তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পেরেছি। স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিতা, সমতা, সহমর্মিতা, মানবতা ইত্যাদি বিষয়গুলো অনুপস্থিত। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় গবেষণা, ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে সব শ্রেণির মানুষ উন্নয়নের সুফল উপভোগ করতে পারছেন না।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, মেহেরপুর পৌরসভা, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং গাংনী পৌরসভা। আন্তর্জাতিক পার্টনার হিসেবে আছে ইকোসিটি বিল্ডার্স, হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা এবং ওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল ফোরাম। সম্মেলনের প্রথম দিনে একটি বিশেষ অধিবেশনসহ মোট ৬টি সমান্তরাল অধিবেশনে ১৬টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
ভিন্নবার্তা ডটকম/পিকেএইচ