সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে চীন থেকে ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল এসেছিল বাংলাদেশে। বিশেষজ্ঞ দলটি দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কোয়ারেন্টিন সেন্টারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া বেশ কিছু স্থান ঘুরে তাঁরা হতাশা প্রকাশ করে বলে গেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ সচেতন নয়, বরং তারা অসচেতন। এতে করে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।’
বিশেষজ্ঞদল নিজ দেশ চীনে ফিরে যাওয়ার আগে এসব ব্যাপারে কথা বলেছে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সরকারকেও পরামর্শ দিয়ে গেছেন তাঁরা। দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আজ বুধবার গণমাধ্যমের কাছে এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘হতাশা প্রকাশ করে চীনের দলটি বলে গেছে, ‘এই করোনা পরিস্থিতির ভেতরেও বাংলাদেশের জনগণ সচেতন নয়; বরং তারা ভীষণ অসচেতন। যেখানে ঘরবন্দি থাকার কথা, সেখানে সাধারণ মানুষ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছে না। পাশাপাশি বসে আড্ডা দিচ্ছে। অপ্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছে। মাস্ক পরিধান করছে না। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না। এতে করে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।’ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতেও তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন।’’
সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে চীনের বিশেষজ্ঞদল একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনও তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে লিখিত আকারেও এ ব্যাপারে পরামর্শ থাকার কথা। তবে পরামর্শক কমিটি এখনো ওই রিপোর্ট হাতে পায়নি। তাঁরা বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে ওই রিপোর্ট জমা দিয়ে দেশে ফিরেছেন।
এদিকে পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা বলেছেন, ‘জনগণ সচেতন না হলে রাষ্ট্রীয় সব শক্তি প্রয়োগ করেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল। ব্যবস্থাটা এমন হওয়া যৌক্তিক, যেখানে জনগণ উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করবে। নিজেকে বাঁচাবে। মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। যদিও সমস্যাটা বড় এবং বৈশ্বিক। করোনা হয়তো অনেক দিন থাকবে। তবে আমাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
লকডাউন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘‘শুধু লকডাউনের পথে না হেঁটে পরিস্থিতি বিবেচনায় যথোপযুক্ত সংখ্যক করোনা টেস্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে শনাক্তকৃত ‘করোনা পজিটিভ‘ রোগীদের হোম আইসোলেশনে না রেখে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রাখতে হবে। কারণ, বর্তমানে যেসব রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই সঠিকভাবে আইসোলেশনের নিয়ম মেনে চলছে না। সুতরাং অসচেতন এসব রোগীকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রাখা হবে যুক্তসংগত বাস্তবতা। তবে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনেরও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। থাকার পরিবেশ থাকতে হবে। এতে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে বলে আমার ধারণা।”
বাংলাদেশে চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম দিকে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বেশি করানো রোগী শনাক্ত হলেও ধীরে ধীরে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
সে সময় জনগণকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় লোকজনের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব বিধিনিষেধ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে সব বিধিনিষেধ মেনে চলতে বলা হলেও জনসাধারণ সেসবের খুব একটা তোয়াক্কা করেনি। লকডাউনের কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে চায়ের আড্ডা কিংবা অযাচিত কারণে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এসএস