রাত্রি দাস: একুশের চেতনা কোমলমতি শিশু কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার প্রায় শতভাগ ১১টি ইউনিয়নের ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার অন্যতম স্মৃতিফলক শহীদ মিনার নির্মান। পূর্বধলা উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র সার্বিক দিকনির্দেনার আলোকে প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে এই মহতি উদ্যোগ উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
একটা সময় ছিল যখন বাঁশ কাঠ কাগজ দিয়ে তৈরী শহীদ মিনার বানিয়ে ফুল দেয়া হতো গ্রামে গঞ্জে পাড়া মহল্লায়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার না থাকার ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারত না বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বদলে গেছে পূর্বধলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চিত্র। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনার।
জেলার পূর্বধলার উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২১ টিতে শহীদ মিনার ছিল,বাকীগুলোতে জাতীয় শহীদ দিবস সহ বিভিন্ন দিবসে এসব শিশু শিক্ষার্থীকে যেতে হতো অন্য কোন স্কুলের শহীদ মিনারে,আবার কোন কোন স্কুলে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হতো।
প্রায় দেড় বছর আগে পূর্বধলা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন শেখ জাহিদ হাসান পিন্স। করোনা পরবর্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যখন শিক্ষাথর্ী ঝড়ে পড়ছিল ঝড়ে পড়া রোধে বিভিন্ন কার্যক্রমসহ তিনি পরিকল্পনা করেন সব স্কুলে শহীদ মিনার তৈরির। সরকারি কোনো বরাদ্দ নয়,স্কুল ফান্ডের নিজস্ব তহবিল ও স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিগণের সহায়তা তৈরি করা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসব শহিদ মিনার। বর্তমানে উপজেলার প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে শোভা পাচ্ছে নান্দনিক শহীদ মিনার।
শালদিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষাথর্ী চাদনী জানায়,আমি প্রথম শ্রেনী থেকে এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি ২১ ফেব্রয়ারীতে আমরা শিক্ষকদের সাথে অন্য যায়গায় গিয়ে ফুল দিতাম বর্তমানে আমাদের স্কুলে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো শহীদ মিনার নিমার্ণ করা হইছে গত বছর থেকে আমাদের শহীদ মিনারে আমরাসহ বাজারের লোকজন ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোঃ মোসলেম উদ্দিন ফকির বলেন,দেশ মাতৃকায় যারা রক্ত দিয়ে ভাষা এনে দিয়েছেন সেই শহীদদের সারা বিশ্ব আজ স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আমরা বই পুস্তকে ছবি দেখিয়ে শহীদ মিনার সম্পর্কে ধারনা দিতে হতো। উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র দিকনির্দেশনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতার্সহ ক্লাস্টার কমিটি ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগতিায় আমাদের বিদ্যালয় আঙ্গিনায় একটি ভালো মানের শদীদ মিনার নির্মিত হয়েছে এতে আমরা গর্ব বোধ করি।
উত্তর খলিশাউর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী রিপন জানায়,বিগত দিনে আমরা সকল শিক্ষাথর্ীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অস্থায়ীভাবে কলাগাছ,বাশ এবং কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে আমরা ফুল দিতাম। আমাদের বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার হওয়াতে ২১ ফেব্রয়ারীতে আমরা এখানেই ফুল দিতে পাড়ি।
পূর্বধলার রাজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফললুক হক বলেন,জাতীয় পতাকা যেমন দেশের প্রতীক তেমনি শহীদ মিনারও ভাষা আন্দোলন এবং মক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক। যারা ৫২র ভাষা আন্দোলনে সালাম বরকত রফিকসহ রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতি রক্ষা করা এবং শ্রদ্ধা জানানো দেশের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের উপজেলার মতো করে জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নিমার্ণ করে জাতীর শ্রেষ্ট সন্তানদের মনে রাখা উচিত।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতার্ মোহম্মদ মফিজুল হক বলেন,বর্তমান উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ পূর্বধলায় যোগদানের পর থেকেই করোনা পরবর্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যখন শিক্ষাথর্ী ঝড়ে পড়ছিল ঝড়ে পড়া রোধে শিক্ষকদের ক্লাসরুমে আকর্ষনীয় পাঠদান,বিনোধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম,বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিনিয়ত খেলাধূলাসহ সাংস্কৃতিক চচার্স এবং তিনি পরিকল্পনা করেন সব স্কুলে শহীদ মিনার তৈরির। তিনি সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতার্ এবং বিদ্যালয়ের সকল প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নিমার্ণ করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিদ্যালয়ের ফান্ডসহ স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আজকের এই সুন্দর নবনির্মিত শহীদ মিনার দৃশ্যমান।
এ বিষয়ে,উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার্ শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন,উপজেলায় যোগদানের পর ১১টি ইউনিয়নের ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২১ টিতে শহীদ মিনার ছিল,বাকীগুলোতে জাতীয় শহীদ দিবস সহ বিভিন্ন দিবসে এসব শিশু শিক্ষার্থীকে যেতে হতো অন্য কোন স্কুলের শহীদ মিনারে,আবার কোন কোন স্কুলে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হতো। বাকী সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা করি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বীর শহীদদের প্রতি কোমলমতি শিশুরা যাতে শ্রদ্ধা জানাতে পারে এবং দিবসগুলোর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারে, সেজন্য শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়েছে। এই মহতী কাজে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতার্ ও সকল সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতার্ এবং প্রধান শিক্ষকদের আন্তরিকতায় উদ্যোগটির সফলতায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন