করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন হু হু করে বাড়ছে ঠিক তখনই টেস্টের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে পরীক্ষার অভাবে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন করোনা সন্দেহভাজনরা। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কয়েক দিনের পরিসংখ্যানও বলছে পরীক্ষার হার কমে গেছে। একবার অধিক সংখ্যক পরীক্ষার পর ১৮ জুন থেকে পরীক্ষার হার কমতে থাকে। গত কয়েক দিন ধরেই ১৬ হাজারের নিচেই করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিং থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৬ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার হার কমেছে। গত ১৬ জুন দেশের ৬১টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৭ হাজার ২১৪ জনের। যা নমুনা পরীক্ষা হয় তাতে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৮৬২ জন।
এরপর দিন ১৭ জুন ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৯২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৭ হাজার ৫২৭টি। ওইদিন করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৪ হাজার ৮ জন। ১৮ জুন ১৬ হাজার ২৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮০৩ জন। এরপর ১৯ জুন ১৫ হাজার ৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেদিন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৩ জন। পরের দিন পরীক্ষার হার আরও কমে যায় ২০ জুন ১৪ হাজার ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেদিন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪০ জন। সর্বশেষ ২১ জুন রোববার ব্রিফিংয়ে বলা হয় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৫৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার ১৬৪টি। এই তথ্যগুলো স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিং থেকে নেওয়া।
রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিচালিত বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের বুথ খোলা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ও সিটি করপোরেশন বিভিন্ন জায়গায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে দিচ্ছে। এছাড়া জেএমআই নামক প্রতিষ্ঠানও নমুনা সংগ্রহে সহযোগিতা করছে। রাজধানীতে শুধু ব্র্যাকেরই অর্ধ শতাধিক নমুনা সংগ্রহ বুথ রয়েছে।
ব্র্যাকের ওই সকল বুথে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি নমুনা সংগ্রহ করা হতো। হঠাৎ করে তিনদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই মুহূর্তে কিটের স্বল্পতা রয়েছে তাই পর্যাপ্ত কিট সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য গত তিনদিন অর্থাৎ ১৯ জুন থেকে তাদের নমুনা সংগ্রহের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে যেখানে প্রতিটি বুথে ২৫-৩০টি নমুনা সংগ্রহ করা হতো। এখন সেখানে প্রতিটি বুথে মাত্র ১৫টি কিট দেওয়া হচ্ছে।
বহু কষ্টে পরীক্ষা করানোর পর রেজাল্ট পেতে দীর্ঘ অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ। এরকম একজন তানবীর রাব্বী রবিন। শেখেরটেকের বাসিন্দা রবিন জানান, গত ১৭ জুন আমি আদাবর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ব্র্যাকের বুথে নমুনা দিয়ে আসি। তখন ওখান থেকে বলা হয়েছিল ফলাফল পেতে ৭ দিন লাগতে পারে। আজ ২১ জুন এখনো আমি কোনো তথ্য পাইনি। কোথায় কার সঙ্গে যোগাযোগ করব তাও বলে দেয়নি। এভাবে আসলে করোনা সন্দেহ নিয়ে বসে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। আমি জানলে পরিবারের সদস্যদের থেকে নিরাপদে থাকতে পারি। যদিও আমার কোনো উপসর্গ নেই তারপরেও ফলাফল না আসা পর্যন্ত ভয় থেকেই যায়।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের একজন ডাক্তার যিনি নমুনা সংগ্রহ কাজের তদারকি করছেন ডা. সাদিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের বলা হয়েছে এই সপ্তাহ কিটের সংকট রয়েছে। আগামী সপ্তাহে কিট আসলেই আবার আগের মতো সরবরাহ করা হবে। তখন পরীক্ষার হারও বেড়ে যাবে। আমাদের এখন ১৫টি করে কিট দেওয়া হচ্ছে। জায়গা ভেদে কোথাও ২০টিও দেওয়া হচ্ছে। তবে আগে যেখানে ২৫-৩০টি কিট পেতাম সেটা এখন পাচ্ছি না। কিট পেলে আমরা নমুনা সংগ্রহ বাড়িয়ে দিতে পারব।
তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাদের দাবি কিটের সংকট নেই। তবে বিভিন্ন দেশ থেকে যে কিট আসত গত দুইদিন সময় মতো কিট আসেনি বলে পরীক্ষার হার একটু কম।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, আমাদের কিটের সংকট নেই। সব ল্যাবে এক ধরনের কিট দিয়ে পরীক্ষা হয় না। যেমন নারায়ণগঞ্জ এবং অন্য আরও একটি জেলায় যে কিট দিয়ে পরীক্ষা হতো সেই কিট আজ আসার কথা ছিল কিন্তু আসেনি। সেগুলো আসলে আবার পরীক্ষার হার বেড়ে যাবে। তবে ঢাকার ল্যাবে কিট সংকট নেই।
পরীক্ষার পর রিপোর্ট ডেলিভারিতে দীর্ঘ সময়ের কারণ জানতে চাইলে বলেন, অনেক সময় একটি পরিবারের ৪-৫ জন পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের একটি মোবাইল নম্বর ও ইমেইল দিচ্ছেন তাতে আমাদের সমন্বয় করতে সমস্যা হয়। তাছাড়া যাদের রেজাল্ট পজিটিভ আসে সাধারণত আমরা দুই দিনের মধ্যে দিয়ে দেই। কোনো কোনো সময় একটু দেরি হয়। আমরা চেষ্টা করছি প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে এটাকে আরও ত্বরান্বিত করা যায়।