প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এ পর্যন্ত মোট ২১১ জন কর্মকর্তা সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকই মাঠ প্রশাসনে চাকরি করছেন। সংক্রমিত কর্মকর্তাদের তালিকায় তথ্যসচিবসহ তিনজন সচিব আছেন। করোনায় মারা গেছেন বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ১১ জন কর্মকর্তা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সংক্রমিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ২০৯ জনই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। দুজন অন্য ক্যাডার থেকে সচিব ও যুগ্ম সচিব হন। সংক্রমিত ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্য কর্মবর্তারা হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১১৩ জন।
বর্তমানে প্রশাসনে মোট কর্মকর্তা প্রায় ৬ হাজার। এর মধ্যে দুই শতাধিক কর্মকর্তা সংক্রমিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কাজের ওপর প্রভাব পড়ছে।
জানা গেছে, যাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁরা প্রায় সবাই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর মধ্যে ১০৪ জন কর্মকর্তা মাঠপ্রশাসনে কাজ করছেন। যাঁদের মধ্যে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার রয়েছেন।
করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সারা দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, ত্রাণ বিতরণ, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন কাজ করে আসছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্নভাবে এসব কাজ করতে গিয়ে মূলত নিজেরাই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবুল কালাম জানালেন, তিনি নিয়মিত অফিস করতেন। ধারণা করছেন, সেখান থেকেই কোনোভাবে সংক্রমিত হয়েছেন।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ইউএনও কাজী লুতফুল হাসান ১৬ জুন থেকে করোনায় সংক্রমিত। এখন তিনি হোম আইসোলেশনে আছেন। তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণ, তদন্তকাজে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয় তাঁকে। এর মাধ্যমেই হয়তো সংক্রমিত হয়েছেন।
সংক্রমিত অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ১০৭ জন সচিবালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করেছেন। তাঁরাও নিয়মিত অফিস করছিলেন। একাধিক মন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিবও সংক্রমিত হয়েছেন। এই দপ্তরগুলোতে তুলনামূলক অন্যদের যাওয়া-আসা বেশি থাকে।
সংক্রমিত তিন সচিব
সর্বশেষ সংক্রমিত হয়েছেন তথ্য সচিব কামরুন নাহার। বিসিএস তথ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তার স্বামী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রতিরক্ষা সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিছুদিন আগে সংক্রমিত হয়ে এখন সুস্থ আছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর। তাঁর স্ত্রীও করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের স্ত্রী করোনায় মারা গেছেন।
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এত জন কর্মকর্তা সংক্রমিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কাজে প্রভাব পড়ছে। তবে এখন অধিক সর্তকতা হিসেবে সভাগুলো ভার্চ্যুয়ালি করা হচ্ছে। অফিসে বসার ক্ষেত্রেও দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। সীমিত উপস্থিতি নিয়ে কাজ হচ্ছে। অপরিহার্য না হলে দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ আপাতত দেওয়া হচ্ছে না। তবে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।
যাঁরা মারা গেছেন
মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে চারজন চাকরিরত অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমে (৬ এপ্রিল) মারা যান দুদকের উপপরিচালক ও উপসচিব জালাল সাইফুর রহমান।
মারা যাওয়া অন্য কর্মকর্তারা হলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ফখরুল কবীর ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক ও যুগ্ম সচিব (পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তা) জাফর আহম্মদ খান।
সাবেক কর্মকতাদের মধ্যে মারা গেছেন সাবেক সচিব এম বজলুল করিম চৌধুরী, অবসর-উত্তর ছুটিতে থাকা অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আলম, সাবেক যুগ্ম সচিব সামসুল কিবরিয়া চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, ইসহাক ভূঁইয়া ও মো. সরওয়ারী আলম এবং মোহাম্মদ আলী (১৯৭০ ব্যাচ)। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে সর্বোচ্চ সতকর্তা নিয়ে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এসএস