আজকের লিখাটি আমার গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কোভিট-১৯ এর দুটি ভৌগোলিক পরিসংখ্যান ও করোনা ভাইরাসের বাংলাদেশ নিয়ে তার বক্তব্য দিয়েই লিখাটি শেষ করবো। কোন প্রকার ভূমিকা ছাড়াই পরিসংখ্যান দু’টি তুলে ধরছি :
ক.
শুরুতেই করোনা ভাইরাসের ভৌগোলিক দু’টি পরিসংখ্যান মিলিয়ে নেই, কোভিট-১৯ আক্রমণে সাথে অক্ষাংশের গভীর সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে। অক্ষাংশ হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকেই অক্ষাংশ বলে। করোনা ভাইরাস প্রথম আক্রমণ করে চীনের উহান প্রদেশে, যার অক্ষাংশ ৩০ ডিগ্রি। ৩০ ডিগ্রি বরাবর যদি পৃথিবীর মানচিত্রে একটি দাগ কল্পনা করি, তবে আমরা দেখবো, করোনা শাক্তিশালী আঘাত সেই দাগ থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠেছে, কিন্তু নিচে নামেনি, অর্থাৎ করোনার কারণে মৃত্যু হয়েছে উপরের দিকে, কিন্তু নিচের দিকে নামমাত্র করোনা হয়েছে, আর মৃত্যুও নেই বললেই চলে।
যেমন- প্রথম শুরু হয় চীনের উহানে যার অক্ষাংশ ৩০ ডিগ্রি, এরপর ইরান যার অক্ষাংশ ৩২ ডিগ্রি, স্পেন ৪০ ডিগ্রি, ইতালি ৪১ ডিগ্রি, জাপান ৪৩ ডিগ্রি, ফ্রান্স ৪৬ ডিগ্রি, জার্মানি ৫১ ডিগ্রি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র (নিউইয়র্ক) ৪০ ডিগ্রি। উল্লেখ্য বাংলাদেশ অক্ষাংশ ২৩.৬ ডিগ্রি, যা ৩০ এর নিচে। ফলে বাংলাদেশ অনেকটাই নিরাপদ অবস্থায় আছে।
খ.
চীনের সবচেয়ে কাছের দেশ তাইওয়ান। দেশটা চীনের থেকে দূরত্ব মাত্র ৮১ মাইল। জনসংখ্যা – চব্বিশ মিলিয়নের কাছাকাছি। অথচ আজ পর্যন্ত কতজন করোনায় সংক্রমিত? মাত্র ৪৭ জন। মৃত্যু – মাত্র একজনের। আর চীনে প্রায় আশি হাজারেরও বেশি মানুষ করোনা সংক্রমিত এবং তিন হাজারেরও বেশি মৃত !!!
জানুয়ারি মাসেই তাইওয়ান বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চীন থেকে সব ধরনের বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দেয় এবং প্রায় একই সময়ে দেশের বাইরে ফেস মাস্ক এর রপ্তানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয় এবং দেশের মধ্যে প্রতিটি ফেস মাস্কের দাম 0.১৭ ডলারে বেঁধে দেয়। তাইওয়ান বিমানবন্দরগুলোতে থার্মাল থার্মোমিটার বসিয়ে দেয়, যাতে কেউ করোনার প্রথম উপসর্গ অর্থাৎ জ্বর নিয়ে সেই দেশে ঢুকতে না পারে। তাইওয়ানের জনগণকে বলা হয়েছে, অসুস্থ বোধ করলে তৎক্ষণিক হাসপাতালে গিয়ে স্বেচ্ছায় টেস্ট করাতে, আর রেজাল্ট পজিটিভ হলে তাঁদের আইসলেশনে থাকাকালীন সরকার তাদের পরবর্তী চৌদ্দ দিনের জন্য ফুড, লজিং এবং মেডিকেল খরচ দেবে।
এছাড়া টেলিভিশন এবং রেডিও স্টেশনগুলোকে প্রতি ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত আপডেট এবং করণীয় সতর্কতা অবলম্বনের উপায়গুলো প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে দেশবাসী জেনে যায় তাঁদের করোনা মোকাবিলায় ব্যক্তিগতভাবে কী সতর্কতা নিতে হবে, আর কী এড়িয়ে যেতে হবে। উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো তাইওয়ানকে এক বড় ধরণের বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
উপরোক্ত দু’টি পরিসংখ্যানের পর এবার শিরোনামে আসি। গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ এর দিনই চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কে প্রথম জানায়, তাদের দেখে ‘সেভারাল আননোন কেসেস অফ নিউমোনিয়া’ ধরা পড়েছে। হাঁ আমি সেই চীনের উহান প্রদেশে জন্ম কোভিড -১৯ এর কথা বলছি। যার জন্য পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। পুরো পৃথিবী যখন সভ্যতার নামে একের পর এক আকাশচুম্বী অবকাঠামো গড়ে তুলছে আবার সেসব রক্ষায় তৈরি করে যাচ্ছে মরনাস্ত্র। তৈরিকৃত সেসব মরানাস্ত্রের বাহাদুরি দেখাতে এবং সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে দুর্বল রাষ্ট্র সমূহের উপর বল প্রয়োগ করে একের পর এক রাষ্ট্রগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। বিশ্ব মানবতাকে রাষ্ট্রহীন করে মজলুম মানবতার লাশের মিছিল যখন বৃদ্ধি করে চলছে। ঠিক এহেন পরিস্থিতিতে জন্ম নিয়েছি আমি কোভিট -১৯।
আমি গত তিন মাসে আগে জন্ম নিয়েছি উহান প্রদেশ থেকে এরপর দ্রুত ধাবিত হয়েছি এখান থেকে আট হাজার কিলোমিটার দূরে ইউরোপে। এরপর বারো হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশ্ব পরাক্রমশালী রাষ্ট্র আমেরিকায়। যারা পুরো দুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে অস্ত্র আর তাদের উৎপাদিত কাগজের ডলার দিয়ে। ওরা বিশ্ব রুচিবোধকে কবর দিয়ে সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছে, শুধু তাই নয় এর পক্ষে পৃথিবীকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে এটাই সভ্যতা। ওদের উলঙ্গ আর নষ্ট সভ্যতা এবং নির্মম পন্থায় সাম্রাজ্যের বিস্তার ঠেকাতে আমি দ্রুত ধাবিত হয়েছি। আর মূহুর্তেই ওদের মানবতা বিধ্বংসী সাম্রাজ্যবাদের ওপর কুঠারাঘাত হেনে সব এলোমেলো করে দিয়েছি।
লেখক : কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক