দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ মজুত রয়েছে, তাই কৃত্রিম উপায়ে পণ্যের সংকট তৈরি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এ মজুদের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় বেশি। কোন পণ্যের ঘাটতি হবার সম্ভাবনা নেই। কৃত্রিম উপায়ে কোন পণ্যের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে এবং বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ আগে থেকেই বাড়ানো হয়েছে। দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদার তুলনার অধিকপণ্য উৎপাদন করেছে। আমদানিযোগ্য পণ্য অনেক আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু পণ্য পরিবহন এবং আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাসের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোন পণ্যেরই সংকট নেই এবং মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বা কারণ নেই। সকল পণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গঠিত টাস্কফোর্স এবং বিভিন্ন কমিটিকে আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে সয়াবিন তেল, মশুর ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর সাশ্রয়ী মূলে ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিক্রি করছে। টিসিবির মাধ্যমে বিগত যেকোন বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির নিয়োগ প্রাপ্ত প্রায় তিন হাজার ডিলার এসব পণ্য ট্রাক সেলে বিক্রি করছেন। ইতোমধ্যে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ৯০টি বাজার মনিটরিং টিম নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এছাড়া টিসিবির কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য ঢাকাতে ৮টি এবং ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান জোরদার করেছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
সভার সিদ্ধান্ত সমূহ
সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে ও আসন্ন রমজানে খাদ্যসামগ্রী পরিবহনে যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে; টিসিবির ট্রাকসেল পুনঃবিন্যাস করার বিষয় বিবেচনা করা হবে; ডলারের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হবে। চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরে সৃষ্ট কনটেইনার জট নিরসনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রেখে, প্রয়োজনে জরুরি পণ্য খালাস করতে আমদানিকারকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রতিদিনের বাজার দর সিটি করপোরেশনকে সরবরাহ করার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা, জেলা প্রশাসন ঢাকায় রমজান উপলক্ষে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিচালিত টিসিবির পণ্য বিক্রয় স্থান সমূহে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। সারা দেশে পাইকারি বাজার চালু করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর তাদের অভিযান আরও জোরদার করবে এবং একই সাথে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাণিজ্য সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অব্যাহত রাখবে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশের বাজারে এর বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ ওষুধ সামগ্রী বিকল্প বাজার সন্ধানে এখন থেকেই আমদানিকারকরা প্রস্তুতি নেবে। টিসিবি সারা বছরব্যাপী তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রনালয় সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবে এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত টাস্কফোর্স আরও জোরদারভাবে কাজ করবে।
সভাটি সঞ্চালনা করেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। সভায় বাংলাদশে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, দোকান মালিক সমিতি ঢাকা ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ঢাকার সভাপতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদক, আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই