জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে পঞ্চগড় জেলা শহরসহ পাঁচ উপজেলায় পেট্রোল পাম্পগুলোতে যানবাহনের উপচেপড়া ভিড়। পাম্পগুলো রাত বারটার পূর্বে কিছু কিছু গ্রাহককে ১০০/২০০ টাকা করে তেল সরবরাহ করে। পরে তেল শেষ বলে পাম্পগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। শহরের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পের সামনে যানবাহন রেখে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন মালিকরা।
তেল না পেয়ে গ্রাহকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় লোকজনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এতে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত বারটার পর নতুন দামে তেল বিক্রি শুরু করে পাম্প মালিকরা।
বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ ও উত্তেজনা নিরসনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ বিভিন্ন পাম্পে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
পঞ্চগড়ে তালিকাভুক্ত ২৯টি পাম্প রয়েছে। জেলায় ডিজেল প্রায় ৩৬ হাজার লিটার, পেট্রোল প্রায় ১৬ হাজার লিটার এবং অকটেন প্রায় ৪ হাজার লিটার চাহিদা রয়েছে। এসব পাম্পে রাত বারটার পূর্বে অনেক গ্রাহককে তেল না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। ভিড় সামাল দিতে তেল পাম্প কর্তৃপক্ষকে হিমসিম খেতে হয়। ১২টা পর্যন্ত চলে ভিড়ের তীব্রতা। তবে পেট্রল পাম্প কর্তৃপক্ষ ২০০ টাকার বেশি পেট্রোল দেননি কোন যানবাহন মালিকদের।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক চালক শরিফুল জানান, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও তেল পাননি। তেল ছাড়া ট্রাক নিয়ে যাবেন কীভাবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
মোটরসাইকেল চালক আশরাফুল জানান, পূর্বের দামে তেল নিতে এসে মাত্র ১০০ টাকার তেল পেয়েছেন। এর বেশি তেল দিচ্ছেন না তেল পাম্প কর্তৃপক্ষ।
অপর মোটরসাইকেল আরোহী নিযামউদ্দিন তেল নিতে এসে তেল না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধি করায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ক্ষুব্ধ মোটরসাইকেল চালক আশরাফুল জানান, অসাধু পেট্রোল পাম্প মালিকরা দাম বৃদ্ধির খবর শুনে তেল দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মজুদকৃত তেল নতুন দামে বিক্রির জন্যই এমনটি করেছেন পাম্প মালিকরা।
পঞ্চগড় ফিলিং ষ্টেশনের মালিক আবু হিরণ জানান, গত জুন মাস থেকে জ্বালানী তেলের সংকট চলছে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী তেল কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করতে পারছে না। আমার পাম্পে দৈনিক ৩০ হাজার লিটার ডিজেলের চাহিদা অথচ আমি পাচ্ছি ১০ থেকে ১৫ হাজার লিটার। পেট্রোলের চাহিদা ৫ হাজার লিটার সেখানে আমি সপ্তাহে পাচ্ছি মাত্র ১ গাড়ি পেট্রোল। এ কারণে বর্তমানে তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। আজকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় একযোগে সকল গ্রাহক পাম্পে ভিড় করছে। আমার যে মজুদ ছিল তা দিয়ে সকল গ্রাহককে তেল সরবরাহ করা সম্ভব না। যতক্ষণ তেল ছিল ততক্ষণ বিক্রি করা হয়েছে। সকল গ্রাহককে ১০০/২০০ টাকা করে তেল দেয়া হয়েছে। এ কারণে মজুদ না থাকায় পাম্প বন্ধ করতে হয়েছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, পাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে পুলিশ পাম্পগুলো তদারকি করছেন। কোন পাম্পের মজুদ কত তা খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পূর্বের মজুদকৃত তেল বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছি।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন