প্রতিবছরের মতো এবারও সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের উত্তরাকাশে জেগে উঠেছে নয়াভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। বৃহষ্পতিবার ভোর থেকে দিনভর তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার উঁচু স্থান থেকে পরিষ্কারভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখেছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার সকালেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল এমন দৃশ্য। প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ধুলাবালি আর মেঘমুক্ত উত্তরের আকাশে পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা যায়।
দেশের শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ে সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মধ্যে শীতের আমেজ শুরু হয়। এ সময় ঘন কুয়াশা থাকে না।
শীতকালীন ভোরে দূর থেকে অপরুপ কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য দেখতে জেলার আশপাশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করেন পঞ্চগড়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়া সদরের ডাকবাংলো অথবা স্থানীয় সরকারি বেসরকারি রেস্ট হাউসে রাত যাপনের চেষ্টা করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
ভ্রমণপিপাসুরা সাধারণত পাসপোর্ট আর ভিসা করে ভারত এবং নেপালের গিয়ে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেন। কিন্তু দূর থেকে বরফে ঢাকা রুপালী কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর যখন সূর্যোদয়ের সময় দিনের প্রথম সূর্যকিরণ দেখা যায়, সেই দৃশ্য শুধু পঞ্চগড় এবং তেঁতুলিয়া থেকেই দেখা সম্ভব। এজন্য প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আগ্রহী অনেকে আসছেন তেঁতুলিয়ায়।
হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিন্ন ভিন্ন রুপ দেখা যায় এখান থেকে। পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দূরবীন বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন নেই। পঞ্চগড় এবং তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখেই হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখা যায়। এ সময়ে নয়নাভিরাম হিমালয় পর্বতমালা সাধারণত বরফে ঢাকা থাকে। এজন্য সাদা মেঘের মতো পিরামিড আকারে উত্তরের আকাশে জেগে উঠে রুপালী কাঞ্চনজঙ্ঘা।
নেপাল এবং ভারতের সিকিম সীমান্তে এ কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান। উচ্চতার দিক থেকে পৃথিবীর প্রথম সারির যে তিনটি পর্বত হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত, সেই পর্বতমালায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপিষ্ঠ থেকে এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। এরপর কেটু পর্বতের উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২৫১ ফুট এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সরাসরি দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। এখান থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার।
ঢাকার মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে পঞ্চগড়ে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মারুফা ইবনাত বলেন, ঢাকার যান্ত্রিক শহর ছেড়ে প্রতিবছর এ সময়ে পরিবারের সকলে মিলে পঞ্চগড়ে আসা হয়। পঞ্চগড়ের আটোয়রীতে আমাদের পুরান বাড়ি। সেখানে অবস্থান করে জেলার তেঁতুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াই। প্রতি বছর নভেম্বরের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত আটোয়ারীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার উঁচু স্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘার এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হই। এবার আগের তুলনায় আরও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এবারও বেশ ভালোই লেগেছে দূর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার এমন রুপ দৃশ্য।
জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষে দিকে এবং নভেম্বরের শুরু থেকে ভোর এবং বিকেলে যখন আকাশ পরিষ্কার থাকে তখন তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন উঁচু স্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গ দেখা যায়।
বর্তমানে বিভিন্ন স্থান থেকে এ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এখন অন্য জেলা থেকেও ট্যুরিস্টরা পঞ্চগড়ে আসছেন। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়ায় থেকে আগাম শীতের আমেজে রুপালী কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। এখানকার মানুষজন বেশ আন্তরিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। তাই ভ্রমণপিাসু আর পর্যটকরা অনায়াসেই এসে ঘুরে যেতে পারেন উত্তরের শুরুর এলাকা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া।
ভিন্নবার্তা/এসআর