শেখ হাসিনার সরকার পতনের চার দিন পর গতকাল শুক্রবার সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় থানা পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকার ২৯টি থানাসহ দেশজুড়ে ৪১৭টি থানায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, যা পুলিশের হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করবে। একই সঙ্গে বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মহাখালী ডাটা সেন্টারসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ঢাকাসহ দেশজুড়ে ৪১৭ থানায় সেনা মোতায়েনআইএসপিআর সূত্র জানায়, জনসাধারণের জান-মাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী দেশব্যাপী স্থাপিত ২০৬টি ক্যাম্পের মাধ্যমে ৫৮টি জেলায় মোতায়েন রয়েছে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দুটি দল জামালপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলায়নে উদ্যত কয়েদিদের বাধা প্রদান এবং কারাগারে রক্ষিত অস্ত্র-গোলাবারুদ সুরক্ষিত করে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা প্রতিহত করে। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় নোয়াখালীর একটি মন্দিরে দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণ সেনাবাহিনী প্রতিহত করে।
এ ছাড়া কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পে নিরাপত্তা প্রদানে সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয় এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ টহল পরিচালনা করে।
আইএসপিআর জানায়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রচার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপতৎপরতা চলমান। দেশবাসীকে এ ধরনের গুজবে আতঙ্কিত না হয়ে সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিজের বিচার-বিবেচনা প্রয়োগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে ও থাকবে বলে জানায় আইএসপিআর।
সকাল থেকে রাজধানীর প্রায় ২৯টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়। এ ছাড়া দেশের সীমান্তবর্তী ২১ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সারা দেশে ৩৬১ থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর মধ্যে ১১০টি মহানগর থানার মধ্যে ৭০টি এবং রেঞ্জের ৫২৯টি থানার মধ্যে ২৯১টির কার্যক্রম চালু হয়েছে।
গতকাল রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং বাধ্য হয়ে দেশত্যাগের পর পুলিশের ওপর হামলা, থানায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেননি। এ কারণে পুলিশের মধ্যে এখনো সার্বিকভাবে শৃঙ্খলা ফেরেনি। ধ্বংসস্তূপে পরিণত থানায় চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসার জায়গাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
সূত্র বলছে, সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে ৬২৫টি থানার মধ্যে ৪৫০টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি থানা থেকে বেশির ভাগ অস্ত্র লুটে নিয়েছে হামলাকারীরা। কিছু অস্ত্র রয়ে গেছে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে।
পুলিশ সদস্যরা বলছেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলায় সারা দেশে এ পর্যন্ত শতাধিক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মাঠ পর্যায়ের বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য। তাঁদের অনেকে এখনো রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি। অনেকে অস্ত্রসহ নিখোঁজ রয়েছেন।
সূত্র বলছে, গতকাল পর্যন্ত রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের অস্ত্রাগারে ৩৪০টি অস্ত্র জমা দেননি কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা। লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।