ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক জীবন বাজি রেখে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড ও আশপাশের সড়ক দখল মুক্ত করেছিল। এরপর বেশ স্বাচ্ছন্দে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করছিল। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর ফের দখল চলে যায় ট্রাক স্ট্যান্ড ও আশপাশের সড়ক। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা ফের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে দখলমুক্ত করেছিল। তারপর আবারো আগের রুপে ফিরে আসে আশপাশের সড়ক ও তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড। এখনও প্রায় পুরো তেজগাঁও এলাকা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের দখলেই রয়েছে। ফলে এ সড়কটিসহ আশপাশের সড়ক দিয়ে ঠিকমতো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারিদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ে ট্রাক স্ট্যান্ডসংলগ্ন সড়কের ওপর থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে সড়ক পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে এ সড়কে চলাচলে নগরবাসীর স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ফের দখলে চলে গেছে তেজগাঁওয়ে ট্রাক স্ট্যান্ড ও সামনের সড়কটি। তবে মাঝে-মধ্যে দিনের বেলা সড়কে পার্কিং করতে দেখা গেলেও রাতে পুরোপুরি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের দখলে থাকে। তবে, স্ট্যান্ডের জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় সংকট থাকায় সড়কের ওপর পুরোপুরি পার্কিং বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানান ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি। এদিকে, ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের জন্য ঢাকার কয়েকটি স্থানে স্ট্যান্ড করার উদ্যেগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড ও আশপাশের সড়ক দখল মুক্ত থাকার সময় ওই এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু এখন দখলে থাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকছে।
সরেজমিন দেখা যায়, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড মূল সড়কের পাশাপাশি সাত রাস্তাসংগ্ন পাশের সড়কগুলোতে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ রাখা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে কোথাও এক লাইন, কোথাও দুই লাইন করে ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এ কারণে পাশে বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর পর্যন্ত সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। সিএসডি গুদামের ২ নম্বর গেট, সিএসডি ভাঙা গেট মোড় হয়ে পুরনো এফডিসি সড়কের পুরোটাই এখন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের দখলে থাকছে। একই অবস্থা দেখা গেছে সাতরাস্তা থেকে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের পাশ দিয়ে দক্ষিণ বেগুনবাড়ি যাওয়ার সড়কে। এ সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশ ছোট ট্রাকের দখলে থাকছে। গাড়ি পার্ক করা এসব সড়কের মাঝে যে জায়গা আছে তাতে একটি গাড়ি বা রিকশা কোনোমতে চলতে পারে। তবে দুটি যানবাহন একসঙ্গে গেলে জটলা বেধে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারিরা।
মালিক সমিতি বলছে, প্রতিদিন কারওয়ান বাজার, সিএসডি গোডাউন, কেন্দ্রীয় ওষুধ গুদাম, বিজিপ্রেস ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির বহু গাড়ি মালামাল লোড-আনলোড করা হয়। এর মধ্যে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার গাড়ি এক রাতে আসে অন্য রাতে যায়। এসব গাড়ি রাস্তা ছাড়া অন্য কোথাও রাখার জায়গা নেই। এছাড়া, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজারের বেশি গাড়ি চালান নেয়ার জন্য আসে। অথচ এ স্ট্যান্ডে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই হাজার গাড়ি রাখা যায়। ফলে তারা বাধ্যে হয়েই গাড়িগুলো সড়কে রাখছেন। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান বলেন, ট্রাফিক নিয়মে রাতে ট্রাক কাভার্ডভ্যানগুলো চলাচল করতে পারে। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি তেজগাঁওয়ের আশপাশে ঢুকছে। অথচ এসব গাড়ি রাখার জন্য পর্যাপ্ত স্থান নেই।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের জায়গাটি মূলত সিটি কর্পোরেশনের না। রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এ জায়গার মালিক। তবে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের সামনের সড়কটি শিগগিরই দখলমুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, করোনার কারণে হয়তো সড়কটিতে সেভাবে নজর দেয়া হয়নি। তবে আশাকরি শিগগিরই সড়কটি দখলমুক্ত হবে। তবে তিনি বলেন, আমিনবাজারে সিটি কর্পোরেশনের একটি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান স্ট্যান্ড রয়েছে। সেটা বাউন্ডারি দেয়ালসহ চালকদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য আবাসন সুবিধাসহ আরও কিছু স্থাপনা করা আছে। খুব শিগগিরই স্থাপনাগুলো উন্নয়ন করে সংস্কার করা হবে। তখন সেখানে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো পার্কিং করা যাবে।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই