জন্ম-মৃত্যু সনদ নিতে নগরবাসীর ভোগান্তি দীর্ঘ দিনের। তবুও ভোগান্তির পর জন্ম-মৃত্যু সনদ পেতো নগরবাসী। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০ আঞ্চলিক কার্যালয়ে এসে জন্ম-মৃত্যু সনদ পাচ্ছে না নগরবাসী। এতে পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করাতে পারছে না তারা। ঢাকার বাহিরে একই অবস্থা বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। জন্ম ও মত্যু নিবন্ধনের সার্ভার থেকে এ সংক্রান্ত বিপুল পরিমাণ তথ্য ইতিমধ্যে উধাও হয়েছে। যা নিয়ে সরকারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে কবে নাগাদ সার্ভার স্বাভাবিক হয়ে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে জন্ম-মৃত্যু সনদ নিতে আসা নগরবাসী চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল পদ্ধতিতে হওয়ায় জন্মনিবন্ধন খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জমি রেজিস্ট্রেশন, করোনার টিকা, বিয়ে এবং স্কুলে ভর্তিসহ ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে সন্তান জন্ম নেয়ার পরই জন্মনিবন্ধন করেন অনেকে। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করায় সার্ভার জটিলতার অজুহাতে গত কয়েকদিন ধরে এ সনদ পাচ্ছে না তারা। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে এমন ভোগান্তিতে পড়ছে সেবা প্রার্থীরা।
অভিযোগ রয়েছে, জনবল সঙ্কট, অদক্ষ জনবল, দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, ত্রুটিপূর্ণ প্রযুক্তির ব্যবহার, ইন্টারনেটের ধীরগতি, কেন্দ্রীয় সার্ভারে ক্রটি, সেবাদানকারীর দুর্ব্যবহার, তথ্য প্রদানে অনীহা এবং নাগরিকদের সচেতনতার অভাবে সারাদেশের জন্মনিবন্ধন সনদ কার্যক্রম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের পক্ষ থেকেও দৃশ্যমান কোনো নেয়া হচ্ছে না। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম সহজ এবং সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভাগীয়, সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং ইউনিয়নে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। তাদের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনে সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এসব টাস্কফোর্স ঠিকমতো কাজ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনের ২০টি অঞ্চল থেকে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয়ভাবে এই সেবা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সার্ভার বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন ধরে এসব কার্যালয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন সেবা প্রার্থীরা। ফলে তাদের ভোগান্তির যেনো শেষ নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ তারা।
সরেজমিনে দুই সিটির কয়েকটি আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে দেখা গেছে সেবাপ্রত্যাশীদের অনেক ভিড়। অনেকেই এসে ফিরে যাচ্ছেন। কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ কররছেন তারা। এক সেবাপ্রত্যাশী বলেন, নিবন্ধন সাইট বছরে কয়েক বার বন্ধ থাকে। গত তিন দিন ছেলের জন্ম নিবন্ধনের জন্য ঘুরছি। প্রথম দুই দিন পরে আসতে বললেও আজ জানালো কবে নাগাদ ঠিক হবে তারা জানে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা অনেক সমস্যায় পড়ে যাবো। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন সেবা প্রার্থীরা। তবে দুই সিটির আঞ্চলিক অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সার্ভার সমস্যায় আমরা ঠিকমত সেবা দিতে পারছি না।
এখানে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। কয়েকদিন ধরে সার্ভার ঠিকমত কাজ করছে না। জটিল কোনো সমস্যা হয়েছে হয়তো। তাই এই সংশোধন কার্যক্রম সাময়িককভাবে বন্ধ রয়েছে। ডিএনসিসির উত্তরা আঞ্চলিক অফিসের সহকারী জন্ম নিবন্ধক তানিয়া পারভিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছি না। তাই এই সময়ের মধ্যে একটিও সনদ দিতে পারিনি। আগেও আমরা সার্ভারের সমস্যায় পড়তাম। সে সময় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু এবার সব বন্ধ। কবে সমস্যার সমাধান হবে জানতে চাইলে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের অফিসে ভিজিট করেছে। আমরাও বলতে পারছি না কবে ঠিক হবে। তবে আশা করি শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই